logo
আপডেট : ২ মার্চ, ২০২২ ১৫:২৯
বইমেলা প্রতিদিন
‘বঙ্গবন্ধু, ভাষার ওপর নতুন বই আসছে বেশি’
ইফফাত শরীফ

‘বঙ্গবন্ধু, ভাষার ওপর নতুন বই আসছে বেশি’

বইমেলার ১৫তম দিন মঙ্গলবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ছবি- ভোরের আকাশ

‘নিজেদের কর্র্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ব্যাপকভাবে নির্যাতন শুরু করে। হত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজসহ এদেশের মানুষের ওপর তারা সব ধরনের নির্যাতন করে। হত্যা বা ধর্ষণ নিয়ে অধিক আলোচনা হয়। পাকিস্তান আর্মির উদ্দেশ্য ছিল নির্যাতনের মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীকে দাবিয়ে রাখা। অতএব এ নির্যাতন উদ্দেশ্যমূলকভাবেই ছিল বহুমাত্রিক। তবে এ প্রচেষ্টা সম্ভব হয়নি। শত নির্যাতন সহ্য করেও এদেশের মানুষ দেশকে স্বাধীন করেছে। সেদিক থেকে নির্যাতন যেমন নিষ্ঠুরতার বিবরণ, ঠিক তেমনিভাবে সেই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে উত্তীর্ণ হয়ে বিজয় অর্জনও স্বাধীনতা আকাক্সক্ষার একটি ঐতিহাসিক উদাহরণ।’

গবেষক আফসান চৌধুরী সম্পাদিক ‘১৯৭১ গণনির্যাতন-গণহত্যা-কাঠামো, বিবরণ ও পরিসর’ নামে গত বছর প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বিষয়ক গ্রন্থে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে যুদ্ধকালীন ঘটনাপ্রবাহ। এবারের একুশের গ্রন্থমেলায়ও বইটি কমবেশি চলছে। তবে মেলায় চাহিদা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নতুন গ্রন্থের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা।

চলছে স্বাধীনতার মাস। দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার মাসে এসে গড়িয়েছে ভাষার মাসের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এর আগেও গত বছর করোনা মহামারির কারণে মেলা দেরিতে হলেও স্বাধীনতার মাসে শুরু হয়। মেলা মানে নানা বইয়ের সমাহার।

বইমেলা ঘুরে দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু, ভাষা এবং অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক বইগুলোর সংখ্যা বেশি থাকলেও স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত নতুন বইয়ের সংখ্যা কম। গতকাল মঙ্গলবার ছিল মেলার ১৫তম দিন। অন্যান্য দিন মেলা দুপুর ২টায় শুরু হলেও মঙ্গলবার মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়। শেষ হয় রাত ৯টায়। এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ৯৩টি।

বাংলা একাডেমির এক নারী বিক্রয় প্রতিনিধি ভোরের আকাশকে জানান, বঙ্গবন্ধু এবং ভাষার ওপর বই অনেক থাকলে ও আলাদা করে স্বাধীনতার ওপর লেখা কোন নতুন বই বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেনি। তবে স্বাধীনতার ইতিহাসভিত্তিক পুরোনো অনেক বই আছে। সারা বছর এ ধরনের বইয়ের চাহিদাও অনেক। তবে তরুণ প্রজন্মের পাঠকরা মেলায় ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ওপর লেখা বইগুলো কম কিনছেন। যদিও সরকারি কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গবেষকরা এসব বইয়ের মূল গ্রাহক। এ বেপারে কথা হয় ‘কথা প্রকাশনীর’ ব্যবস্থাপক মো. জাফিরুল ইসলামের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বইগুলোর চাহিদা তরুণ পাঠকদের কাছে কম। তবে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গবেষণার জন্য এরকম বই কেনা হচ্ছে। অন্য বইগুলো যেমন মেলার পর আর বিক্রি হয় না, কিন্তু এ ধরনের বইগুলো সারা বছরই চাহিদা আছে।’ কথা প্রকাশনীতে স্বাধীনতার ওপর দুটি নতুন বই এসেছে। সালেক খোকনের লেখা বই ‘১৯৭১ বিজয়ের গৌরবগাথা’ বইটি ২৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। স্বাধীনতার ওপর লেখা বিশিষ্ট কবি নির্মলেন্দু গুণের লেখা ‘একুশে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধের কবিতা’ বইটি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় দুটি বই ১০ থেকে ১৫ কপি বিক্রি হয় বলে জানান এ কর্মকর্তা।

 

 

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘উষার দুয়ার’ প্রকাশনীতে স্বাধীনতার ওপর নতুন দুটি বই এসেছে। আমেনা আফতাবের লেখা ‘তিন কিশোর যুদ্ধে যাওয়া’ বইটি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেনের লেখা ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু’ বইটির মূল্য ১১৩ টাকা। তবে মেলার এখন পর্যন্ত এ বইগুলো বিক্রি হয়নি বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় প্রতিনিধি শফিউর রহমান। পাঞ্জেরী প্রকাশনীতে স্বাধীনতার ওপর লেখা দুটি নতুন বই এসেছে। ফাল্গুনী তানিয়ার লেখা ‘বাংলাদেশের নারীযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর অবদান’ বইটি বিক্রি হচ্ছে ৩৯০ টাকায়। বীরপ্রতিক শাহজাহান কবির লেখা ‘অপারেশন জ্যাকপট’ বইটি বিক্রি হচ্ছে ৪১৩ টাকায়।

পাঞ্জেরী প্রকাশনির বিক্রয় প্রতিনিধি রবিউল আলম ভোরেরে আকাশকে জানান, স্বাধীনতার বইয়ের মধ্যে অপারেশন জ্যাকপট বইটি দৈনিক ২০ কপির বেশি বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের নৌ-কমান্ডো অভিযান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। বিজয় সুনিশ্চিত ও ত্বরান্বিত করতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি নৌ-কমান্ডোরা যে অনন্য অভিযান পরিচালনা করেছিলেন তার নাম ‘অপারেশন জ্যাকপট’।

এ অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনীর অস্ত্র ও রসদবাহী উল্লেখযোগ্য কিছু জাহাজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অচল হয়ে যায় বন্দর। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর জলপথে চলাচল অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ গেরিলা অভিযান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করিয়ে দেয়। পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে এমন দুঃসাহসিকতার নজির বিরল।

তবে প্রকাশক এবং লেখকরা বলছেন ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার ওপর আরো অনেক বেশি বের হওয়া প্রয়োজন। মহান মুক্তিযুদ্ধের নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ ইতিহাস ও সাহিত্য সম্পর্কে অনেকের ধারণা স্পষ্ট নয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে ইতোমধ্যে যেসব গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে, তার মধ্যে সত্যি সত্যি কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল, তার ফলই-বা কী হলো, কার কেমন অবদান ছিল এর নির্লিপ্ত পরিচয় খুব কমই মেলে। সেই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে তরুণ প্রজন্ম যাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানতে পারে, সেজন্য তাদের প্রচুর বই পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন লেখক এবং প্রকাশকরা।