২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (২ মার্চ) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, সিটিটিসির বিশেষ অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর খিলক্ষেত থানার বাজার মসজিদের সামনে থেকে ৪৪ বছর বয়সী আজিজুল হক রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে জিহাদি বই, মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও কম্পিউটারের হার্ডডিক্স উদ্ধার করা হয়। তার বিরুদ্ধে খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
সিটিটিসি বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে নাম বদল করে আসছিলেন আজিজুল হক রানা। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে টেইলারিং, মুদি দোকানি, বই বিক্রেতা, ড্রাইভার এবং সবশেষ প্রিন্টিং ও স্ট্যাম্পপ্যাড বানানোর কাজ করেন তিনি। শুধু তাই নয়, এ ধরনের ছদ্মপেশার আড়ালে অত্যন্ত গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রমও চালিয়ে আসছিলেন আজিজুল হক রানা।
সংবাদ সম্মেলনে সিটিটিসি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠের সভা মঞ্চের পাশে মাটির নিচে ৪০ কেজি ওজনের একটি এবং হেলিপ্যাডের (ডহর পাড়া) পাশে মাটির নিচে ৭৬ কেজি ওজনের আরেকটি বোমা পুঁতে রাখা হয়।
ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা, হত্যার ষড়যন্ত্র এবং বিস্ফোরক আইনে কোটালীপাড়া থানায় তিনটি মামলা করে পুলিশ। শাহনেওয়াজ একটি মামলায় ২০ বছরের সাজা, রাষ্ট্রদোহ মামলায় মৃত্যুদণ্ড ও আরেকটি মামলায় খালাস পেয়েছিলেন।
হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতা মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন আজিজুল হক রানা। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বোমা দুটি উদ্ধারের পর আজিজুল হক রানা কোটালীপাড়া থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে আজিজুল হক রানা ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হন। এরপর মাদ্রাসার ওস্তাদ হরকাতুল জিহাদের সক্রিয় সদস্য মুফতি হান্নানের অনুসারী মাওলানা আমিরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন তিনি। মাওলানা আমিরুল ইসলাম তাকে হুজি-বিতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করেন। মাদ্রাসায় মুফতি হান্নান, আব্দুর রউফ, আব্দুস সালামসহ হুজি-বি’র সিনিয়র সদস্যদের যাতায়াত ছিল; তারা সেখানে গোপন বৈঠক করতেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, আজিজুল হক রানা সংগঠনে যোগদানের পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নেওয়ার জন্য হুজি নেতা মুফতি ইজহারের চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় যান। সেখানে তালিম গ্রহণ শেষে বোমা তৈরি, আত্মরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য সাহসী জিহাদি বিশ্বস্ত কয়েকজন লোক সংগ্রহের জন্য মাওলানা আমিরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন।
মাওলানা আমিরুল ইসলাম নির্বাচন করেন আজিজুল হক রানাকে। আমিরুল ইসলাম তাকে চিঠি দিয়ে গোপালগঞ্জ শহরের বিসিক এলাকায় সোনার বাংলা সাবান ও মোমবাতি তৈরির কারখানায় পাঠান। আজিজুল হক রানা সেখানে মুফতি হান্নানের সঙ্গে দেখা তাকে মাওলানা আমিরুল ইসলামের চিঠিটি দেন। মুফতি হান্নান তাকে সংগঠনের নিয়মকানুন সম্পর্কে বুঝিয়ে দেন এবং আজিজুল হক রানার নাম বদলে ছদ্মনাম ‘শাহনেওয়াজ’ রাখেন।
আজিজুল হক রানা নতুন নাম শাহনেওয়াজ পরিচয়ে আনুমানিক ১৫ দিন মোমবাতি প্যাকিংয়ের কাজ করেন। বিশ্বস্ততা অর্জন করলে কারখানার পেছনে একটি কক্ষে গোপন বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতি পান তিনি। কারখানায় মোমবাতি ও সাবান তৈরির আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলত।
বোমা তৈরির কাজে আজিজুল হক রানা, মো. ইউসুফ ওরফে মোসহাব, মেহেদী হাসান ওরফে আ. ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্তার ওরফে তারেক হোসেন, মো. মহিবুল ওরফে মফিজুর রহমান, শেখ মো. এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস প্রমুখ জড়িত ছিলেন বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।