টি-টোয়েন্টি খেলাটাই চার-ছক্কার। প্রতি বলেই থাকে রান নেওয়ার তাগিদ। বোলারদের ঘাম ছুটানোই থাকে ব্যাটারদের মূল কাজ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজের আগে বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের আভাস দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম থেকেই হিট করার বাসনা টাইগার কাপ্তানের।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। বেলা ৩টায় শুরু হবে ম্যাচ। সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস ও গাজী টিভি।
ওয়ানডে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টির আগেও প্রবল আত্মবিশ্বাসী। তবে ভয় আছে ব্যাটিং সাইড নিয়ে। সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতলেও দুটি ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল খুবই বাজে। বিশেষ করে টপ অর্ডাররা ছিলেন ব্যর্থ। শেষের দুটি ম্যাচে ব্যাট হাতে ছন্দে ছিলেন লিটন দাস। এক সেঞ্চুরি ও এক হাফ সেঞ্চুরিতে দলের মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি।
টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে দলটির তিন স্পিনার রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী ও মুজিব উর রহমান টি-টোয়েন্টিতে খুবই কার্যকরী বোলার। যদিও আফগান দলে বেশ কিছু পরিবর্তন এসেছে। তারপরও বোলিং সমৃদ্ধ দলটি চোখ রাঙাচ্ছে বাংলাদেশকে।
তবে ওয়ানডের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজেও আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে পাওয়ার হিটিং ব্যাটিংয়ের আভাস দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বললেন, ‘আমি ইনশাআল্লাহ কাল প্রথম বল থেকেই মারব। চার-ছক্কা মারার চেষ্টা করব।’
কিন্তু কীভাবে। সাম্প্রতিক সময়টা ভালো যাচ্ছে না মাহমুদউল্লাহর। বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজে তিনি পুরোপুরিই ব্যর্থ। সংশয়ে নেই তিনি। বরং রাইট ট্র্যাকে আছেন বলে দাবি রিয়াদের। কিন্তু পরিসংখ্যান বলে উল্টো কথা। চট্টগ্রামে তিন ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহর রান ৪৩। ৩ ম্যাচে একটি বাউন্ডারি। প্রথম ম্যাচে টাইগারদের ১৮ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর ছয় নম্বরে নামেন তিনি। ১৭ বল খেলে ৮ রান করে তিনি ফেরেন সাজঘরে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ বলে ৬ রান। শেষ ম্যাচে খেলেছেন ৫৩ বল। কিন্তু কোনো বাউন্ডারি ছাড়া করেন ২৯ রান।
দলে মাহমুদউল্লাহর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক। সংবাদ সম্মেলনে তার নড়বড়ে অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘প্রথমত আমি আপনাকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনার কোনো সংশয় আছে, আমার অবস্থান নিয়ে? না, আলহামদুলিল্লাহ্ আমার কোনো সংশয় নেই। আমার মনে হয়, আমি রাইট ট্র্যাকে আছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রবাবলি আই নিড টু হিট সাম গুড বল। ইনশাআল্লাহ্ আই উইল বি ব্যাক অন রাইট ট্র্যাক। কারণ হয়তোবা আমার কাছে দলের চাহিদা ওরকম থাকে। এই ওয়ানডে ম্যাচগুলোতে হয়তোবা আমি ওভাবে ডেলিভার করতে পারিনি। আমি চেষ্টা করব। আমার ওপর যে এক্সপেকটেশন দলের, আমি চেষ্টা করব পূরণ করতে।’
টি-টোয়েন্টি দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন মুনিম শাহরিয়ার। তরুণ এই ব্যাটার গেল বিপিএলে বেশ ভালো করেছে। তার প্রসঙ্গে মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘মুনিমের ভালো সুযোগ আছে কালকে। এখন নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না, আমরা উইকেটটা আজ দেখলাম। আমরা পরিকল্পনা করব, আমাদের ব্যাটিং অর্ডারটা আমরা কীভাবে সাজাতেই চাই। শুধু টপ অর্ডার নিয়ে পরিকল্পনা করলেই হবে না, গোটা ব্যাটিং ইউনিট আমাদের ভালো করতে হবে। কোনোদিন টপ অর্ডার ভালো শুরু করবে না, মিডিল অর্ডার সেটা ক্যারি করবে, টপ অর্ডার ভালো শুরু করলে মিডল অর্ডার বিল্ডাপ করতে হবে। তো আমার মনে হয় এটা টোটাল টিম গেম। টি-টোয়েন্টিতে ধারাবাহিকতা অনেক কঠিন। তবে টিম হিসেবে আমরা যদি খেলতে পারি তবে আমাদের ভালো সুযোগ আছে।’
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান এখন পর্যন্ত ৮৯টি। জয় ৬০ ম্যাচে। হেরেছে ২৮টি। টাই হয়েছে এক ম্যাচ। সেখানে বাংলাদেশের পরিসংখ্যান তুলনামূলক অনেকটাই ধূসর। ১২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা হয়েছে বাংলাদেশের। জয় মাত্র ৪৩টি। হার ৭৮টি। রেজাল্ট হয়নি দুই ম্যাচে। হেড টু হেডে এগিয়ে আফগানিস্তান। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান মুখোমুখি হয়েছে ৭ ম্যাচে। বাংলাদেশের জয় মাত্র দুটিতে। বিপরীতে চারটিতে জিতেছে আফগানরা। এক ম্যাচ পরিত্যক্ত। তার মানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে অনুমিতভাবেই এগিয়ে থাকছে সফরকারীরা।
টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে। মিরপুরে বাংলাদেশের যাত্রাটা হয়েছিল উড়ন্ত। আফগানদের হারানো গিয়েছিল ৯ উইকেটে। দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ এই মিরপুরেই ত্রিদেশীয় সিরিজে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তান জিতেছিল ২৫ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জেতে ৪ উইকেটে। ফাইনাল ম্যাচটি হয়নি, বৃষ্টির কারণে। ফলে ট্রফি হয়েছিল ভাগাভাগি। এবার দুই ম্যাচের সিরিজে রেজাল্ট কী হবে?