logo
আপডেট : ২ মার্চ, ২০২২ ২২:৫৭
জীবন বাঁচাতে খারকিভ ছাড়ছে বাসিন্দারা, নিহত ২০০০
নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবন বাঁচাতে খারকিভ ছাড়ছে বাসিন্দারা, নিহত ২০০০

ইউক্রেনে বেসামরিক নাগরিকদের ঘরবাড়িতে রুশ সেনাদের হামলার ঘটনায় ঘর পালানো এক বৃদ্ধাকে সহায়তা করছেন তার সঙ্গীরা।

ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে অবিরাম রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রুশ সেনারা। জীবন বাঁচাতে শহরের বাসিন্দরা জীবন বাঁচাতে শহর ছেড়ে দিগবিদিক পালিয়ে যাচ্ছে। ওই শহরের কেন্দ্রস্থলে ও আবাসিক এলাকায় গোলাবর্ষণ করছে রুশ সেনারা।

এদিকে, ইউক্রেন সরকার দাবি করেছে, গত সাতদিনে রুশ সেনারা কমপক্ষে ২ হাজার বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। ধ্বংস করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার, হাসপাতাল স্টেশনসহ মানুষের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন স্থাপনা।

বিবিসি জানিয়েছে, জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার মানুষ যে কোনো উপায়ে খারকিভ শহর থেকে পালিয়ে ইউক্রেনের পশ্চিম দিকে যাচ্ছে। এই পালিয়ে যাওয়া লোকদের মধ্যে আলেকজান্দ্রা মার্কেভিচ অন্যতম। তিনি গত রবিবার খারকিভ ছেড়ে সপরিবারে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে শহর ছেড়ে পালানোর ভয়ংকর অভিজ্ঞতা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তিনি।

মার্কেভিচ বলেন, ‘ছেলে পাশাকে সঙ্গে নিয়ে দৌড়ে রেল স্টেশনে গিয়ে পশ্চিমগামী একটি ট্রেনে উঠে পড়ি। ট্রেনে থাকা অবস্থায় পাশে একটি রকেট হামলা হয়। ওই রকেটের অংশ বিশেষ এসে ট্রেনে আঘাত করে। আমরা ভেবেছিলাম, ট্রেনটি সম্ভবত লাইনচ্যুত হবে। তবে ভাগ্য ভালো থাকায় কোনোমতে বেঁচে যাই। ওই দিনটি ছিল আমার ছেলে পাশার ১১ তম জন্মদিন। আমার ছেলে মৃত্যু ভয়ে কেঁদে ওঠে। আমি নিজেও ভয়ে ছিলাম। সে অবস্থাতেই ছেলেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি।’

তিনি বলেন, এমন ভীতিকর পরিস্থিতির ভেতরে আছেন শহরের সব বাসিন্দা। এখন পরিস্থিতি নিশ্চয় আরো খারাপ। জানি না অন্যদের কপালে কী ঘটেছে।

তিনি বলেন, খারকিভ শহরে এখনো অনেক লোক আছে যারা পালিয়ে যেতে পারছেন না কিংবা ইচ্ছুকও নন। তাদের অবস্থা এখন জীবন মৃত্যুর মাঝামাঝি দাঁড়িয়েছে।

৪০ বছর বয়সী ইরিনা রুজিনস্কা এদের মধ্যে অন্যতম। মঙ্গলবার তিনি তার দুই ছেলে, পুত্রবধূ এবং নাতি-নাতনিকে নিয়ে তার দ্বিতীয় তলা বিশিষ্ট অ্যাপার্টমেন্টে আশ্রয় নিয়েছেন।

‘আমরা ঘরের জানালাগুলো বালিশ ও স্কচ টেপ দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছি।’ বলছেন রুজিনস্কা ৷ ‘গতকাল আমরা দোকানে গিয়ে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি খাবার কেনার জন্য। কিন্তু, দোকানের শেলফগুলো ছিল খালি।’করুণ কণ্ঠে বিবিসিকে জানান বৃদ্ধা রুজিনস্কা।

এই বৃদ্ধা জানান, ‘খারকিভের লোকজন তাদের ঘর বাড়ি নিয়ে গর্ব বোধ করে। কিন্তু আমরা এখন আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত।’

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,‘এটি একটি বড়, সুন্দর শহর। আমার শহর। কিন্তু রাশিয়া এখন এই শহরকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে চায়।’

সাত দিনে নিহত ২০০০ বেসামরিক নাগরিক

এদিকে এক সপ্তাহ ধরে চলা রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণে এ পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের বেশি বেসামরিক ইউক্রেনীয় নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।

এই হতাহতদের মধ্যে দশজন জরুরি সেবায় নিয়োজিত উদ্ধারকর্মীও আছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করেন, উদ্ধারকর্মীরা রাশিয়ার ছোড়া ৪০০ টিরও বেশি আগুন নিভিয়েছে এবং ৪১৬টি বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করেছে।

‘যুদ্ধ শুরুর সাত দিনের মধ্যে রাশিয়া শত শত পরিবহন ডেপো, আবাসিক ভবন, হাসপাতাল এবং কিন্ডারগার্টেন ধ্বংস করেছে’ বলেও দাবি ইউক্রেনের।


বিবিসি