রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চার বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১৮ হাজার ৪২৮ কোট টাকা। এর মধ্যে শুধু এক জনতা ব্যাংকেরই ঘাটতি ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এর বাইরে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ প্রভিশন ঘাটতি পরিমাণ ন্যাশনাল ব্যাংকের ৩ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
প্রভিশন হলো খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি, যা গ্রাহকের আমানতের রক্ষাকবজ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তিন ধরনের খেলাপি ঋণ হলো যথাক্রমে, সাবস্ট্যান্ডার্ড (এসএস) বা প্রাথমিক মানের খেলাপি ঋণ, ডাউটফুল (ডিএফ) বা মধ্যম মানের খেলাপি ঋণ এবং ব্যাড অ্যান্ড লস (বিএল) বা মন্দ মানের খেলাপি ঋণ। এই তিন ধরনের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে যথাক্রমে ২৫ ভাগ, ৫০ ভাগ ও ১০০ পর্যন্ত প্রভিশন বা সঞ্চিতি রক্ষা করতে হয়।
এ সঞ্চিতি বা প্রভিশন আমানতের বিপরীতে গ্রাহকের রক্ষাকবজ হিসেবেও বিবেচনা করা হয় এবং ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে সংরক্ষণ করতে হয়। মুনাফা না থাকলে সেই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হিসাবে দেখানো হয়। যে ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে সে ব্যাংক মুনাফা করতে পারছে না, সমস্যায় বলে মনে করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হিসাবে গ্রাহকের সব দায় সরকার বহন করার কারণে গ্রাহকের স্বার্থও সরকার দেখে থাকে। করোনা মহামারির মধ্যে ঋণের কিস্তি না দিলেও খেলাপি হবে না। অর্থাৎ, প্রভিশন রক্ষার বাধ্যবাধকতা থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে রেহাই দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। করোনা মহামারির আগে যে পরিমাণ প্রভিশন ঘাটতি ছিল, করোনাকালে নতুন করে ঘাটতি বেড়ে প্রভিশন ঘাটতি নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছে।
২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংকের যথাক্রমে ৭ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকার বিপরীতে ২ হাজার ৬১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ঘাটতি। বেসিক ব্যাংকের ৭ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকার বিপরীতে ৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা ঘাটতি। জনতা ব্যাংকের ১২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণের বিপরীতে সর্বোচ্চ ঘাটতি ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অপর রূপালী ব্যাংকের ৫ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা খেলাপি বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ২০৩ টাকা। অন্যদিকে বেসরকারি ন্যাশনাল ব্যাংকের সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকার বিপরীতে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ ৩ হাজার ২৬২ কোটি টাকা।