logo
আপডেট : ৪ মার্চ, ২০২২ ১৪:৫৫
সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস
সুযোগসন্ধানীদের পোয়াবারো, ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা
মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ

সুযোগসন্ধানীদের পোয়াবারো, ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা

ডিএসই ও সিএসইর লোগো

মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ তথ্যের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা, না করা, শেয়ার বিক্রি কিংবা ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য একটি প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ তথ্য গোপন রাখার কথা। কিন্তু হচ্ছে এর উল্টোটা। এ তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত এসে ঠকছেন বিনিয়োগকারীরা। পক্ষান্তরে পোয়াবারো হচ্ছে সুযোগ সন্ধানীদের।

সর্বশেষ আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগে গুজব রটে যায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) ফেরত কোম্পানি সোনালি পেপার ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে। এর মধ্যে ২০ শতাংশ নগদ এবং ২০ শতাংশ বোনাস। এককান দু’কান করে এ কথা ছড়িয়ে পড়ে বাজারে। এতে তরতর করে শেয়ারদর বাড়তে থাকে।

আর্থিক অবস্থায় দুর্বল থাকা কোম্পানির শেয়ারদর ১৯৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৫৯ টাকায় চলে যায়। এ সময় অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে কোম্পানিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ডিএসই কর্তৃপক্ষ। জবাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ জানান, তাদের কাছে শেয়ারদর বাড়তে পারে এমন কোনো সংবেদনশীল তথ্য নেই। বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটি ঠিকই ৪০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদান করে। অভিযোগ রয়েছে কর্তৃপক্ষই এই তথ্য বাজারে ছড়িয়ে শেয়ারদর বাড়িয়েছে। যদিও তখন বিষয়টি অস্বীকার করেছে তারা।

এদিকে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় না নিয়ে যারা এ কোম্পানির শেয়ার কিনেছিলেন তারা এখন বিপাকে রয়েছেন। কারণ লভ্যাংশ দেয়ার পরই শেয়ারদর ৭০০ টাকার নিচে চলে আসে। মাঝখান থেকে কিছু লোক উচ্চদরে শেয়ার বিক্রি করে ফাইদা হাসিল করেছে।

এই কোম্পানির মতো নাভানা সিএনজি, ইফাদ অটোস, এপেক্স স্পিনিংসহ আরো কিছু কোম্পানির কি পরিমাণ লভ্যাংশ দিবে তা আগে থেকেই বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। কোম্পানির সংবেদনশীল তথ্যের কথা উল্লেখ করে অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, এসব কোম্পানি যখন অফিশিয়ালি তথ্য প্রকাশ করেছে, এর আগেই তাদের কাছে এ তথ্য ছিল।

নিয়ম অনুযায়ী, এ তথ্য সবার আগে ডিএসই, সিএসই ও বিএসইসির কাছে আসার কথা থাকলেও তাদের কাছে আসছে সবশেষে। ফলে একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র ফায়দা লুটছে। নষ্ট হচ্ছে বাজারের পরিবেশ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

জানা গেছে, কোম্পানির লাভ-লোকসান, শেয়ারপ্রতি আয়, নতুন বিনিয়োগ, মালিকানা বদল, কেনাকাটাসহ বাজারের জন্য মূল্য সংবেদনশীল সব তথ্য ফাঁস করছেন কোম্পানির শেয়ার ডিভিশনের লোকজন। কোম্পানি পরিচালকদের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ রয়েছে। এসব তথ্য ইতিবাচক হলে তারা শেয়ার কিনে তারপর বন্ধু-বান্ধবদের মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আর নেতিবাচক হলে শেয়ার বিক্রি করে খবর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। খবর আগে যারা পান, তারা লাভবান হচ্ছেন। যারা আগে পাচ্ছেন না, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

এ বিষয়ে লুৎফর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী ভোরের আকাশকে বলেন, শুধু এসব খবরই নয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের ইপিএসই কেমন হবে বা আর্থিক হিসেব কেমন হবে সেসব খবরও আগেই মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও প্রথমে তা কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং তারা বেশি লাভবান হন। তিনি বলেন, কোনোভাবে যেন এসব তথ্য ফাঁস না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া দরকার।

সূত্রমতে, যারা আগে থেকে সংবেদনশীল তথ্য পান, তারা সঙ্গে সঙ্গে এটা কাজে লাগাতে শুরু করেন। শেয়ারদর বাড়বে এমন খবর এলে তারা ক্রেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের জন্য বাজারে ক্রেতার সংখ্যা বেশি দেখা যায়। ক্রমে এ শেয়ারের দর বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে তারা হাউসগুলো নিজেদের লোক দিয়ে শেয়ারদর বাড়বে এমন গুজব ছড়িয়ে দেয়, যার প্রভাবে শেয়ারদর দ্রুত বাড়তে থাকে।

সর্বশেষ যখন এটা স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যদিয়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে আসে, তখন আর ওই শেয়ারের দর বাড়ার সুযোগ থাকে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা না বুঝে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বেশি দরে এ শেয়ার কেনেন। এ সুযোগে আগে যারা তথ্য পেয়েছিলেন তারা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন। এর কুফল ভোগ করতে হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের। বেশিরভাগ সময় যার শিকার হন বাজারে নতুন আসা বিনিয়োগকারীরা। পক্ষান্তরে যখন কোনো কোম্পানির নেতিবাচক খবর আসে, সে খবরও আগে আগেই ফাঁস হয়। সে সময় নানা গুজব ছড়িয়ে কাঙ্খিত দরে শেয়ার বিক্রি করেন সুযোগ সন্ধানীরা। পরে যখন খবর পান, তখন আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কিছু করার থাকে না। কারণ তিনি আগেই ফাঁদে পা দিয়ে বসে আছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করে দেয়া অন্যায়। এটা সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন। বিষয়টি আমাদের নজরদারিতে রয়েছে। কেউ যদি এমন করে এবং তা প্রমাণিত হয় তবে অবশ্যই তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, কোনো কোম্পানি এভাবে তথ্য ফাঁস করছে, এমনটি আমার জানা নেই। তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এমন করে এবং প্রমাণ হয়, তবে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী তার শাস্তি হবে।