ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা চত্বরে উদ্বোধনের আট মাসের মাথায় ফাটল ধরা সেই মডেল মসজিদটিতে জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূলত আতঙ্ককে পেছনে ফেলে মসজিদটিতে নামাজ আদায় করেছেন জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে আসা মুসল্লিরা। এছাড়াও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাও সেখানে নামাজ আদায় করেছেন। পুরুষদের পাশাপাশি মসজিদের তৃতীয় তলায় নামাজ আদায় করেছেন নারীরাও।
শুক্রবার (৪ মার্চ) দুপুরে ওই মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জুমার নামাজের আজানের আগ মুহূর্ত থেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে করে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিরা ওই মডেল মসজিদ প্রাঙ্গণে আসেন। তখন মানুষের সমাগমে কানায় কানায় ভরে উঠে মসজিদ প্রাঙ্গণ। উৎসবমুখর পরিবেশে প্রথমবারের মতো কাঙ্ক্ষিত মডেল মসজিদটিতে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, নারীসহ দুই হাজারের বেশি মানুষ আজ এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন। এদিন নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে জেলার উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও।
আরো পড়ুন: উদ্বোধনের আট মাসেই ‘মডেল মসজিদে’ ফাটল!
নামাজ আদায় শেষে স্থানীয় মুসল্লি মজিবর রহমান জানান, মসজিদের ফাটলের বিষয়ে প্রথমে আতঙ্ক কাজ করেছে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়াররা মসজিদ পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তাই আর ভয় লাগছে না। মসজিদটিতে সব সময় মানুষে ভরপুর থাক। ইবাদত আদায় করুক। এটাই প্রত্যাশা করি।’
মুনতাসিম রহমান নামে এক মুসল্লি বলেন, ‘এতো মানুষের ভিড়ে নামাজ আদায় করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। এখানে নিরাপত্তার সঙ্গে নামাজ আদায় করেছি। এমন উৎসবমুখর পরিবেশে এবারই প্রথম ইবাদত করলাম।’
স্থানীয় রিয়াদুল চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল জানতে পেরেছি হরিপুর মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করা হবে। আজ এখানে নামাজ আদায় করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে।’
গণপূর্ত বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী কে. এম নুরুল হাসান বলেন, ‘মসজিদের ফাটলের যে বিষয়টি ছিল, সেটি সামান্য ত্রুটি। আমি বারবার বলেছিলাম এটিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নাই। আজ মসজিদে দুই হাজারের বেশি মানুষ নামাজ আদায় করেছে। খুব ভালো লাগছে যে মানুষ তাদের ভেতরের আতঙ্ককে জয় করে মসজিদে এসেছে।’
মসজিদ হস্তান্তরের আগে নামাজ আদায়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গতকাল এই মসজিদটি পরিদর্শন করেছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাসেম মোহাম্মদ শাহীন। তিনি অনুমতি দিয়েছেন যে, আজ এই মসজিদে জুমা থেকে যেন নামাজ আদায় করা হয়। তাই আমরা নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটি পরিষ্কার করেছি এবং মুসল্লিদের যাতে কোনো রকম সমস্যা না হয় সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।’
তবে যেসব স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে মেরামত করা হচ্ছে বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
হরিপুর মডেল মসজিদে আজ জুমার নামাজ আদায় করেছেন জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান। মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘মডেল মসজিদে এসে ইসলামের সঠিক চর্চা করতে হবে। ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচারের প্রতিরোধ করতে হবে। এখানে ইসলামিক লাইব্রেরি আছে। এখান থেকে আমরা ধর্মীয় চর্চা করতে পারব এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারব।’ এ সময় সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।
মডেল মসজিদে মুফতি মাসুদুর রহমান হামিদীর ইমামতিতে জুমার নামাজ আদায় করেছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল করিম, উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুল, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ জেলা ও উপজেলার পুরুষ ও নারীসহ দুই হাজারের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।