শুক্রবার থেকে মাঠে গড়িয়েছে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। উদ্বোধনী ম্যাচে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে মিশন শুরু করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মেয়েরা। আজ বিশ্বকাপ মিশনে অভিষেক হবে বাংলাদেশের মেয়েদের। নিজেদের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে রুমানা-নিগাররা। ডানেডিনে ম্যাচটি শুরু হবে শনিবার ভোর ৪টায়।
বাংলাদেশের প্রথম প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। ধারেভারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকছে প্রোটিয়া মেয়েরা। তবে বাংলাদেশের মূল শক্তির জায়গা বোলিং। সালমা খাতুনের অফ স্পিন, নাহিদা আক্তারের বাঁহাতি স্পিন, রুমানা আহমেদ ও ফাহিমা খাতুনের লেগ স্পিন। বরাবরই বাংলাদেশের বোলিংয়ের মূল শক্তি বৈচিত্র্যময় এই স্পিন আক্রমণ। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে কাজটা কঠিন। কন্ডিশন ও উইকেট এখানে পেসারদের দাপট। তবে দুর্ভাবনার কিছু দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। পেস বোলিং ইউনিটকেই বরং তিনি বলছেন দলের সম্পদ।
অভিজ্ঞ জাহানারা আলম আছেন তার পেস আক্রমণে, ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সফলতম পেসার যিনি। অভিজ্ঞ লতা মণ্ডলও আছেন দলে। আরেক অভিজ্ঞ পেসার রিতু মনি সাম্প্রতিক সময়ে আছেন দারুণ ফর্মে। নিগারকে আরো আশাবাদী করে তুলেছে তরুণ পেসারদের পারফরম্যান্স। সাম্প্রতিক সময়ে বেশ উন্নতির ছাপ রেখেছেন সুরাইয়া আজমিন ও ফারিহা ইসলাম তৃষ্ণা।
ম্যাচের আগের দিন গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘সবশেষ দুটি প্রস্তুতি ম্যাচে পেসাররা কিন্তু অসম্ভব ভালো বল করেছে। কেউ শুরুটা ভালো না পেলেও শেষে ও মাঝে চেষ্টা করেছে পুষিয়ে দিতে। পেস বোলিং ইউনিট যেটা আছে, আমার দলের জন্য এটা সম্পদ। আমার ও সবার বিশ্বাস, মূল ম্যাচগুলোতেও তারা তাদের পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারবে।’
‘সুনির্দিষ্ট করে বললে, রিতু মনি ধারাবাহিকভাবে ভালো বোলিং করে যাচ্ছে। তার প্রতি দলের আস্থা আছে। জাহানারা আলম অবশ্যই নতুন বলে সব সময় সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।’
প্রস্তুতি ম্যাচের দুটিতেই হেরেছে বাংলাদেশ ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের সঙ্গে। ইংলিশদের বিরুদ্ধে ম্যাচে জাহানারা চোট পেয়েছিলেন। তবে তার খেলা নিয়ে সংশয় নেই। অধিনায়কের ধারণা, প্রতিপক্ষকে চমকে দিতে পারেন বাঁহাতি এই পেসার। তিনি বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে সবশেষ ম্যাচে ফারিহা তৃষ্ণা অসম্ভব ভালো বোলিং করেছে। ক্রিকেট বিশে^র কাছে সে একদম অদেখা। তবে খুবই প্রতিভাবান বোলার। এই টুর্নামেন্টে তাকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের জন্য কার্যকর হবে।’
বাংলাদেশের পেস ইউনিটকে যেমন দলের সম্পদ বলছেন নিগার, প্রতিপক্ষের তেমনি মূল শক্তি পেস আক্রমণ। অভিজ্ঞ শাবনিম ইসমাইল, মারিজান ক্যাপ, আয়াবঙ্গা খাকা, মাসাবাতা ক্লাসকে নিয়ে গড়া আক্রমণকে রাখা হয় বিশে^র সেরা পেস আক্রমণগুলোর মধ্যে।
তবে প্রস্তুতি দারুণ হয়েছে বলেই এই পেস আক্রমণকে সামলাতে আত্মবিশ্বাসী নিগার। তার মতে, ‘আমরা এখানে একটু আগে এসেছি কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই। নেলসনে ৮ দিনের অনুশীলন সেশন করেছি আমরা, সেখানে নিজেদের মধ্যে ম্যাচ খেলেছি। এখানে উইকেটে কীভাবে মানিয়ে নেওয়া যায়, কোচ দেখিয়েছেন।’
‘উইকেট অবশ্যই সুন্দর ও পেস বোলিং সহায়ক। তবে আমরা প্রস্তুত হয়েই এসেছি যে কীভাবে পেস বোলিং সামলাব। আমরা ব্যাটাররা প্রস্তুত আছি। যদি আমরা আমাদের খেলাটা খেলতে পারি, নিজেদের সেরাটা দিতে পারি, আমার কাছে মনে হয়, ভালো ম্যাচ আমরা খেলতে পারব।’
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ম্যাচ ৭ মার্চ। প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড। ১৪ মার্চ শক্তিশালী পাকিস্তানের মোকাবিলা করবে নিগার সুলতানা শিবির। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েরা খেলবে ২২ মার্চ। ১৮ মার্চ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে বাংলাদেশের ম্যাচ। সেমিফাইনালের দুই ম্যাচ হবে ৩০ ও ৩১ মার্চ। ফাইনাল মাঠে গড়াবে ৩ এপ্রিল। এই তিন ম্যাচের জন্য থাকবে রিজার্ভ ডে।
ছেলেদের ২০১৯ ওয়ানডে বিশ^কাপের মতোই ফরম্যাট। প্রতিটা দল একে অপরের বিপক্ষে খেলবে। পয়েন্ট টেবিলের সেরা চার দল খেলবে সেমিফাইনাল। শীর্ষে থাকা দল লড়বে চতুর্থ স্থানে থাকা দলের বিপক্ষে, দুই ও তিন নম্বর দল মুখোমুখি হবে একে-অপরের।
দ্বিতীয়বারের মতো নারীদের বিশ্বকাপে থাকছে ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম (ডিআরএস)। দুটি করে রিভিউ পাওয়া যাবে প্রতি ইনিংসে। বিশ^কাপের চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ১ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ডলার। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের পাওয়া অর্থের দ্বিগুণ। সব মিলিয়ে প্রাইজ মানি এবার বেড়েছে ৭৫ শতাংশ। রানার আপ ৬ লাখ ডলার, সেমিফাইনালের হেরে যাওয়া দুই দল ৩ লাখ ডলার ও বাকি দলগুলো ৭০ হাজার ডলার করে পাবে।