logo
আপডেট : ৫ মার্চ, ২০২২ ০৯:৩৯
১৮ বছরেও হয়নি সেতুর সংযোগ সড়ক
সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো
জিয়াউর রহমান, নেত্রকোনা

সেতুর ওপর বাঁশের সাঁকো

নব্বইয়ের দশকে নেত্রকোনার রায়পুর ইউনিয়নের চাকুয়া বিলের সেতু নির্মাণ করা হয়। ২০০৪ সালের বন্যায় এই সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের মাটি সরে যায়। তারপর ১৮ বছর চলে গেলেও দুই পাশে মাটি দিয়ে আর সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি। দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগ নিয়ে সেতুটি ব্যবহার করছেন এলাকাবাসীরা।

সেতুর দুই পাশে মাটি না দিয়ে ইউনিয়ন অফিস থেকে দেওয়া হতো লিজ। সেই লিজ নিয়ে কেউ একজন সেতুর সংযোগ সড়কের অংশে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। ফলে এই এলাকার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি নিয়ে বাঁশের সাঁকোর মাধ্যমে পারাপার হচ্ছেন।

সেতুটির পূর্ব দিকে যাওয়াইল, শিমুলিয়া, নকদাপাড়া, চাকুয়া, হাপানিয়া, কৈলাটি। পশ্চিম দিকে ফকিরের বাজারসহ বেশ কিছু গ্রাম। এসব গ্রামের মানুষ সেতুটি পার হয়ে জেলা সদর, হাসপাতাল, ইউনিয়ন পরিষদ ও হাট বাজারে যাতায়াত করে।

জানা যায়, সেতুর সংযোগ সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় দুই পাশেই বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। এর ওপর দিয়ে লোকজন চলাচল করছে। সেতুটি ভালো না থাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে প্রায় ১২ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তিও বাড়ে এলাকাবাসীর। অনেক ক্ষেত্রে সাইকেল বা মোটরসাইকেল যাতায়াতের সময় পানিতে পড়ার মতো ঘটনা ঘটে।

ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সেতুর সংযোগ সড়ক তৈরি না করে তা লিজ দিয়ে দেয়। যারা লিজ নেন তারা এলাকাবাসীর কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে। এতে তারা লাভবান হলেও কষ্ট করে সাধারণ মানুষ। এছাড়া শিক্ষার্থী, শিশু ও বয়স্কদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি মধ্যে পড়তে হয়।

ফকিরের বাজারের চল্লিশ কাহনিয়া হাফিজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা ছোটবেলা থেকে চাকুয়া বিলের এই সেতুতে বাঁশের সাঁকো দেখে আসছি। এটা আমাদের কাছে মনে হয় যেন সেতুর উপর বাঁশের সাঁকো। এটাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’

মোজাম্মেল নামের একজন জানান, আমার বাড়ি কলমাকান্দা উপজেলার কৈলাটি ইউনিয়নে। তবু আমি রায়পুর ইউনিয়নের ফকিরের বাজারে যাচ্ছি। কারণ এটি একটি বিখ্যাত বাজার। তাই সবাই এখানে বাজার করতে আসেন।

তিনি বলেন, ‘ইউনিয়ন চেয়ারম্যানরা চাইলেই সেতুর দুই পাশে মাটি কাটতে পারত। কিন্তু বছর বছর লিজের বর্ধিত মুনাফার আশায় তারা তা করেনি। এতে আমরা যারা বাজার করতে আসি, তাদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পায় শতগুণ।’

ফকিরের বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম বলেন, ‘স্থানীয় গ্রামগুলোর মানুষ সেতুটি দিয়ে যাতায়াত ও যানবাহনে পণ্য পরিবহন করত। সেতুটির সংযোগ সড়কের মাটি সরে যাওয়ায় গ্রাম থেকে শহরে ধান, চাল ও কৃষিপণ্য যানবাহনে পরিবহণ করা যাচ্ছে না। ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। অসুস্থ ব্যক্তিদের সাঁকো পার হয়ে হাসপাতালে যেতে কষ্ট হয়।’

রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান রাজুর কাছে এত বছরেও সেতুটিতে মাটি না কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই সেতুতে আগে লিজের মাধ্যমে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হতো। এবার নির্বাচনের আগে আমি উন্মুক্ত করে দিয়েছি নিজের টাকায় সাঁকো করে।’

তবে কেন মাটি কাটাননি- এমন প্রশ্নের জবাব তিনি এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে কথা বলে আর জাতীয় পত্রিকায় লিখে কি হবে? এত বছর ধরে একটি সেতু পরে আছে সেটি কি এলজিইডি দেখে না।’

বারহাট্টা উপজেলা প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তেঘুরিয়া বাজার থেকে ফকিরের বাজার পর্যন্ত সাত কিলোমিটার রাস্তাই কাঁচা। এক কিলোমিটার রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। আর বাকিটাও দ্রুত হবে। এর মধ্যে চাকুয়া ব্রিজসহ একই রাস্তায় অপর আরেকটি ব্রিজকে ‘প্রোগ্রাম ফর সাপোর্টিং রুরাল ব্রিজেস’ প্রকল্পের আওতায় দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে আশা করি, দ্রুতই এটির কাজ শুরু হবে।’