কুমিল্লা সিটি নির্বাচনকে নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রথম পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন অনেকে। তফসিল ঘোষণা না হলেও এই সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী
এলাকায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া। তবে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রমজান আসন্ন হওয়ায় তফসিল ঘোষণায় একটু ভেবে চিন্তে এগোতে হচ্ছে। রমজানের আগে নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার
রমজানের পরেও হাতে বেশি সময় নেই। সে কারণে রমজানে আগেই তফসিল দিতে হবে। ভোট করতে হবে রমজানের পরেই। এ কারণে পুরো রমজানজুড়েই প্রচার চালাবেন প্রার্থীরা।
২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব নিয়েছে নতুন নির্বাচন কমিশন। দায়িত্ব নিয়েই ওইদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে পরিচিতি সভা করে। একই সঙ্গে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন পরিচালনার বিষয়টিও
আলোচনা করে। বিশেষ করে ইসি সচিবালয় থেকে নতুন ইসিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে তাদের হাতে বেশি সময় নেই।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ ৫ বছর। নির্বাচিত হওয়ার প্রথম সভা থেকেই এই সময় গণনা করা হয়ে থাকে। মেয়াদ শেষের
আগের ১৮০ মধ্যে যে কোনো সময় নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী ১৬ মে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ফলে এই সিটির নির্বাচনের ক্ষণ
গণনা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই।
সর্বশেষ কুমিল্লা সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ। ওই নির্বাচনের বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র নির্বাচিত হন। এদিকে এই সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে
এলাকায় নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। তবে বিএনপি আগে থেকে স্থানীয় সরকারের সব ধরনের নির্বাচন বর্জন করে চলেছে। সর্বশেষ তারা নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন বয়কট করে। যদিও কে এম হুদা
কমিশনের অধীনের পরিচালিত সর্বশেষ এই সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো মহলেই প্রশ্ন ওঠেনি। কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৭ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের অধীনেও
পরিচালিত প্রথম নির্বাচন ছিল কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। ওই বছর ৩০ মার্চ তাদের অধীনে পরিচালিত এই সিটি নির্বাচনও ছিল সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, নবনিযুক্ত কাজী হাবিবুল আউয়ালের ইসির অধীনেও প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লায়। যা নতুন ইসির জন্য একটি পরীক্ষাও। এর মাধ্যমেই তাদের প্রমাণ করতে হবে
তাদের অধীনে আগামী নির্বাচন কেমন হবে। এছাড়াও কুমিল্লার সিটি নির্বাচনের পর রাজশাহী খুলনা, সিলেট বরিশাল এবং গাজীপুর সিটি নির্বাচন শেষে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণে সবার
নজর এই ইসি নির্বাচন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেদিকেই। যদিও সদ্য বিদায়ী কমিশনের অধীনেও প্রথম নির্বাচন ছিল কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। যে নির্বাচন সবার কাছেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। পরবর্তী
নির্বাচনগুলো প্রশ্নবিদ্ধ। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুমিল্লার নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বোঝা যাবে এই ইসির অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন কতটা প্রভাবমুক্ত হয় ।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন জানান, দুই-একদিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে কুমিল্লা নির্বাচনের অনুরোধ করা হবে।
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১৮ মার্চ পালিত হবে পবিত্র শবেবরাত। এই হিসেবে ২ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে মাহে রমজান। ঈদুল ফিতর পালিত হবে ২ মে। অপরদিকে
কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে জন্য হাতে সময় রয়েছে ১৬ মে পর্যন্ত। আইন অনুযায়ী ১৬ মের আগেই কুমিল্লা সিটি নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে।
২৭ ওয়ার্ড, ৯টি সংরক্ষিত ওযার্ড নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠিত। যার মোট আয়তন প্রায় ৫৩ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার। প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস এই সিটিতে। সিটি করপোরেশন হওয়ার
আগে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা নামে দুটি পৌরসভা ছিল। ১০ জুলাই ২০১১ তারিখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ জারি করে প্রশাসন পৌরসভা দুটিকে একটি সিটি
করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। সিটি করপোরেশন গঠনের আগে কুমিল্লা শহর প্রায় ১২৫ বছরের অধিক সময় ধরে পৌরসভার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছিল। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর ২০১২ সালে ৫
জানুয়ারি প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।