logo
আপডেট : ৬ মার্চ, ২০২২ ১১:১২
দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া দুম্বা পালনে উপযোগী
জহির রায়হান,বরিশাল ব্যুরো

দক্ষিণাঞ্চলের আবহাওয়া দুম্বা পালনে উপযোগী

রেজাউল করিম বাদলের খামারের দুম্বা

রেজাউল করিম বাদল। পেশায় একজন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা। তিনি মানবসম্পদ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর পাস করেন। মধ্য বয়সি এই মানুষটি ছোটবেলা থেকেই পশুপাখি পালনে আগ্রহী ছিলেন। তিনি বরিশালের কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা। প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলেও জীবনের শুরুতে আর্থিক সংকটে ভেস্তে যায় বাদলের স্বপ্ন।

শিক্ষাজীবন শেষে প্রথমে কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। পরে লাইব্রেরির ব্যবসার লভ্যাংশ এবং সর্বশেষ ইউনিভার্সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তার বেতনে কিছুটা স্বাবলম্বী হন। এরপর ছোটবেলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালের দিকে নিজ বাড়িতেই পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমে চার লাখ টাকায় তিনটি নারী জাতের টার্কি দুম্বা কেনেন।

বরিশালের আবহাওয়া দুম্বা পালনে উপযোগী হওয়ায় পর্যায়ক্রমে নারী-পুরুষ জাতের মোট ১৮টি টার্কি দুম্বা কিনে ফার্মের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেন তিনি।

কর্মচারীরা বলেন, ‘প্রতিদিন সবুজ ঘাস, খড়, গম, ভুট্টা, ছোলা, গাছের পাতা খেয়েই বেড়ে উঠছে এসব দুম্বা।’

দুম্বা ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম বাদল বলেন, ‘প্রথমে ইউটিউব ঘেঁটে দুম্বা পালনের কৌশল শিখি। কিন্তু ইউটিউবের কিছু কিছু মিথ্যা অফার দেখে প্রতারিত না হয়ে নিজে নিজেই খামারি হওয়ার চেষ্টা করি।

তিনি জানান, তার ফার্মের দুম্বা পালন ৩টা থেকে শুরু করে বর্তমানে ৭০/৭১টি দুম্বা রয়েছে। যার বাজারমূল্য আনুমানিক কোটি টাকার কাছাকাছি। আপাতত বাজারজাত করার কোনো পরিকল্পনা না থাকলেও প্রতিদিন দুম্বা কিনতে ফার্মে ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১২টি দুম্বার বাচ্চা হয়েছে। দু-এক মাস পর আরো ৪০টি গাভিন দুম্বা বাচ্চা দেওয়ার সময় হবে। এমতাবস্থায় দুম্বা লালনপালনে ফার্মের জায়গায় সঙ্কুলান হচ্ছে না। পাশাপাশি পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট। প্রাণিসম্পদ বিভাগের নিয়মিত চিকিৎসা সহায়তা পেলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আরো বড় পরিসরে দুম্বার ফার্ম করতে চান।

উদ্যোক্তা বাদল বলেন, ‘১৫ মাসে দুইবার বাচ্চা দেওয়া দ্রুত বর্ধনশীল প্রাণী দুম্বার চাহিদা বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে মিটিয়ে দেশের অন্যত্র চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তাই এ অঞ্চলের বেকার জনগোষ্ঠীকে দুম্বা পালনে আগ্রহী করার জন্য সরাসরি খামারি থেকে পরামর্শক হিসেবে কাজ করে জাতীয় পর্যায় ভূমিকা রাখতে চাই।’

বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আলম বলেন, ‘বরিশাল বিভাগে এই প্রথম দুম্বা পালন হচ্ছে। এতে আগ্রহ বাড়ছে অনেকের। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দুম্বা চাষে উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহায়তা করছে।

‘দক্ষিণাঞ্চলে দুম্বা চাষ পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। তবে এখন পর্যন্ত দুম্বা চাষে ফল ভালো। আমরা মনে করছিলাম উপকূলীয় অঞ্চলের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া দুম্বা পালনে অনুপযোগী থাকে; কিন্তু বরিশাল অঞ্চলে দুম্বা পালনে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না।