logo
আপডেট : ৬ মার্চ, ২০২২ ১৪:১৫
বইমেলা প্রতিদিন
‘শেষের কবিতা’, ‘কোথাও কেউ নেই’ এখনো পছন্দ
ইফ্ফাত শরীফ

‘শেষের কবিতা’, ‘কোথাও কেউ নেই’ এখনো পছন্দ

‘শেষের কবিতা' ও ‘কোথাও কেউ নেই’ এর প্রচ্ছদ। ছবি- ভোরের আকাশ

‘বিলেত ফেরত ব্যারিস্টার অমিত রায় প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত এবং ভীষণ প্রেমাবেগ আপ্লুত এক চৌকশ যুবক। অমিত একবার শিলং পাহাড়ে বেড়াতে যান। সেখানে এক মোটর দুর্ঘটনায় আকস্মিক পরিচয় ঘটে লাবণ্যের সঙ্গে। সেখান থেকেই প্রেমের সূত্রপাত। লাবণ্য দূরদর্শী ও বাস্তববাদী। অচিরেই সে বুঝতে পারে অমিত প্রেমাবেগ সর্বস্ব এক কল্প জগতের রোমান্টিক মানুষ। তার চরিত্রে প্রেমবিলাস আছে। কিন্তু গৃহবিলাস নেই।

‘তারপরও প্রেমের গভীরতা বিয়ের আয়োজন পর্যন্ত নিয়ে যায় দুজনকে। এ সময় শিলংয়ে হাজির হয় কেতকী। তার হাতে অমিতের দেওয়া আংটি। আংটি দেখিয়ে সে অমিতকে তার বলে দাবি করে। ফলে ভেঙে যায় লাবণ্য-অমিতের বিবাহ আয়োজন। শেষ পর্যন্ত অমিত স্বীকার করেন, লাবণ্যের সঙ্গে তার প্রেম যেন দিঘির জল, সে জল বয়ে আনবার নয়, সেই জলে মন তার সাঁতার দেবে। আর কেতকীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘড়ায় তোলা জল প্রতিদিন তুলবে, প্রতিদিন ব্যবহার করবে’।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’ এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে ভালোবাসার কথামালা। ‘শেষের কবিতা’ একটি মনস্তাত্ত্বিক রোমান্টিক উপন্যাস। এ উপন্যাসে প্রেমের দুটি স্বরূপকে খুব স্পষ্ট করে প্রকাশ করা হয়েছে। একদিকে অমিত রায়ের উচ্চমার্গীয় সমাজের নাক উঁচু লোকের সভা, অপরদিকে স্বমহিমায় বিরাজিত শিলং পাহাড়ের প্রকৃতিকন্যা লাবণ্য। বস্তুত রোমান্টিসিজম বাস্তববাদিতা এ দুয়ের এক অদ্ভুত মিলন দেখা যায় এ উপন্যাসে।

যারা প্রকৃত বইপ্রেমিক যারা সত্যিকার অর্থে পাঠক তাদের ঘরে বিশ্বকবির এই বইটি নেই এমন ঘর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বাঙালি পাঠকের কাছে প্রথম থেকে জনপ্রিয় এই অমর সৃষ্টির। বর্তমানেও এর গ্রহণযোগ্যতা একটুও কমে যায়নি। এখনো আগ্রহ নিয়ে বইটি সংগ্রহ করেন পাঠকরা।


‘পুথিনিলয়’ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি আছিয়া আক্তার রানী জানান, তাদের স্টলে পাঠকরা রবীন্দ্রনাথ ‘শেষের কবিতা’ এবং ইমরান উজ-জামানের লেখা বই ‘ঢাকার প্রাচীন পেশা ও তার বিবর্তন’ বইটি পাঠকপ্রিয়তা বেশি পাচ্ছে। তবে ‘শেষের কবিতা’ বইটি ছোট এবং সহজে বহন করা যায় বলে পাঠক বেশি নিচ্ছেন। বইটি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। এখন পর্যন্ত বইটি প্রায় ২০০ কপির বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, এখনো বেচাকেনার শীর্ষে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শেষের কবিতা’। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের বই ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘শ্রেষ্ঠ ও রোমান্টিক উপন্যাস’, জাফর ইকবালের বই ‘তিতুনি এবং তিতুনি’, হুমায়ূন আজাদের বই, রুদ্র মোহাম্মদ শহিদুল্লার বই ‘প্রেমের কবিতা’, শাহরিয়ার খানের কমিক সিরিজ ‘বেসিক আলী’ সহ বেশকিছু বই এবারের মেলায় পাঠকদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়েছে।

কাকলী প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি রেজাউল করিম ভোরের আকাশকে জানান, এবারে আমাদের স্টলটা একটু পেছনের সাইডে পড়ে যাওয়াতে বেচাবিক্রি কিছটা কম। তবে জাফর ইকবালের ‘তিতুনি এবং তিতুনি’ বইটি এখন পর্যন্ত ১৫০ কপির বেশি বিক্রি হয়েছে। এছাড়া হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই বইটি ১৩০ কপির বেশি বিক্রি হয়েছে। এই দুটি বইয়ে পাঠকপ্রিয়তা ছিল বেশি। দুটি বই ২২৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল ছিল বইমেলার শিশু প্রহর। সেখানে দুরন্ত শিশুদের অনন্ত উপস্থিতি। বিভিন্ন বয়সি শিশুরা স্টল ঘুরে ঘুরে বইয়ের পাতা উল্টে নিজেদের পছন্দের বই খুঁজতে দেখা যায়। স্টলের পাশে থাকা কয়েকটি খেলাধুলার স্পটেও তাদের মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। কেউবা বাবা-মায়ের হাত ধরে, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে আবার কেউবা শিক্ষকদের সঙ্গে এসেছে প্রাণের মেলায়।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, ছোটদের মজার মজার সব বইয়ের স্টল এবং বিনোদনকেন্দ্র সাজানো হয়েছে। শিশু চত্বরে প্রবেশ করলেই মনে হবে এ যেন কোনো শিশুরাজ্য। যেখানে শিশু-কিশোরদের রাজত্ব। এখানে ছিল শিশু-কিশোরদের সায়েন্স ফিকশন, ভূতের গল্প, কৌতুক এবং ছড়াসহ নানা ধরনের সব বই।

অমর একুশে বইমেলায় এবার প্রচুর বই আসছে। বাংলা একাডেমি তথ্যমতে এ বছর এখন পর্যন্ত মেলার ১৯ দিনে নতুন বই এসেছে মোট ২ হাজার ২৫৭টি বই। তবে এসব বইয়ের মধ্যে ভালো বইয়ের সংখ্যা খুব নগণ্য। তবে যেসব বই পাঠকের চাহিদার কাছে বেশি চলছে তেমনি কিছু বইয়ের খবর নেওয়া গেছে।