অভিনব কৌশলে জালিয়াতির মাধ্যমে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ২ শতাধিক এটিএম বুথ মেশিন থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। এই চক্রের মূলহোতাসহ ৮ জনকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোববার (০৬মার্চ) র্যাব মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
চক্রটি ঢাকা শহরের ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা লোড করার কাজে নিয়োজিত ছিল। এই ২৩১টি এটিএম বুথ মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছে। যারা প্রয়োজনে বিভিন্নস্থানে অর্থ পৌঁছে থাকে।
র্যাব জানায়, লোডিং-ট্রেতে টাকা স্থাপনের সময় ১৯টি ১ হাজার টাকার নোটের পরপর অথবা অন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ইচ্ছাকৃতভাবে জ্যাম করে রাখত চক্রটি। কোনো ক্লাইন্ট এটিএম বুথে টাকা উত্তোলনের জন্য এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে গোপন পিন নম্বর দিয়ে কমান্ড করলে ওই পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে পার্সবীনে জমা হতো। পরবর্তীতে সেই টাকা চক্রটি সরিয়ে নিত। এক্ষেত্রে মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা টাকাগুলো আত্মসাৎ করত। শুধু তাই নয়, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট, কারিগরী সংক্রান্ত বিষয়ে বেশ কয়েকজনকে নিয়োজিত রাখত গ্রেপ্তারকৃতরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন
খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল রাতে র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। এসময় (১) আব্দুর রহমান বিশ্বাস (৩২), মোঃ তারেক আজিজ (২৫), তাহমিদ উদ্দিন পাঠান, সোহান (২৮), মোঃ রবিউল হাসান (২৭), হাবিবুর রহমান, ইলিয়াস (৩৬), মোঃ কামরুল হাসান (৪৩), মোঃ সুজন মিয়া (৩১) ও মোঃ আব্দুল কাদেরকে (৪৩) গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি জানান, অভিযানে ২টি চেক বই, ১টি এটিএম কার্ড, ৪টি আইডি কার্ড, ১টি স্বর্ণের নেকলেস, ১ জোড়া বালা,১ জোড়া কানের দোল, ১টি আংটি এবং নগদ ৯ লক্ষ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা উদ্ধার করা হয়। একটি স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম এটিএম বুথের ব্যবহার শুরু করে। পরবর্তীতে প্রায় সকল ব্যাংকে এর প্রচলন ঘটে। কিন্তু এটিএম বুথ ব্যবহার শুরু হওয়ার পর হতে বেশ কিছু অভিযোগ আলোচনায় আসে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথের ব্যবস্থাপনা থার্ড পার্টি বা আউট সোর্সিং এর মাধ্যমে সম্পন্ন করে থাকে। থার্ড পার্টি টাকা স্থাপন, নিরাপত্তা, কারিগরী ত্রুটি ইত্যাদি বিষয়টি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে থাকে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাংকের অডিটে এটিএম বুথের টাকার বেশকিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। এ কারণে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থার্ড পার্টি পরিবর্তন করে। এরপরেও অনিয়ম ও গড়মিল পরিলক্ষিত হতে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও থার্ড পার্টি বিষয়টি নিয়ে র্যাবের শরণাপন্ন হয়। এরপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ২-৩ বছর একসাথে চাকুরী করার সুবাদে পারস্পরিকভাবে পরিচিত হয় তারা। এক পর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে।
গ্রেফতারকৃত আব্দুর রহমান সিন্ডিকেটের মূলহোতা। সে তার এক সহকর্মী কাছে থেকে বিষয়টি রপ্ত করে বলে জানায়।
গ্রেপ্তারকৃত অন্যরা তার সহযোগী। তারা কন্ট্রোলরুম, লোডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্স এর দায়িত্ব পালন করে থাকে।
আব্দুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ৩/৪ বছর পূর্বে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানীতে চাকুরী নেয় সে। তার দায়িত্বে ছিলমিরপুর, কালশী, বেনারশি, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকা। প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাৎ করে আসছে সে। এ দলের সদস্যরা শিক্ষিত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আব্দুর রহমান, সোহাগ পাঠান, হাবিব ও কামরুল এটিএম বুথে লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্স এর কাজ করে। কাদের, সুজন, রবিউল ও তারেক আজিজ এটিএম বুথে শুধু লোডিং এর কাজ করে।