logo
আপডেট : ৭ মার্চ, ২০২২ ১৫:০৬
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ
দাবায়ে রাখতে পারবা না...
নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবায়ে রাখতে পারবা না...

আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা অবিস্মরণীয় গৌরবের এক অনন্য দিন। সুদীর্ঘকালের আপসহীন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক উত্তাল জনসমুদ্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।

‘... তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ কিছু বলবে না। ... সাত কোটি মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালি মরতে শিখেছে, তাদের কেউ দাবাতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

৭ই মার্চের সেই অগ্নিঝরা ভাষণে ছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তির সার্বিক দিকনির্দেশনা। বাঙালির আদর্শ ও চেতনার কেন্দ্রবিন্দু এই ভাষণ নিরস্ত্র জাতিকে সশস্ত্র জাতিতে পরিণত করে। কেবল বাঙালি জাতিই নয়, পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী, নিপীড়িত, বঞ্চিত ও শোষিত জনগণের জন্যও দিকনির্দেশক হিসেবে আখ্যায়িত হয় ৭ই মার্চের ভাষণ। ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক অরগানাইজেশন (ইউনেস্কো) বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে ওয়ার্ল্ড ডকুমেন্ট হেরিটেজের অংশ বলে ঘোষণা করে। তবে এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বহু আগেই ভাষণটি বিশে^র অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ বাঙালি জাতির গর্বের ইতিহাস। এ ইতিহাস বিস্মৃত হওয়ার নয়; স্মরণের, অনুসরণের।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের প্রভাব ছিল অকল্পনীয়। এ ভাষণ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে সৈনিকে পরিণত করে। এ ভাষণে উদ্দীপ্ত হয়েই শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে মুক্তির জন্য লড়াই করে তারা। প্রতি মিনিটে ৫৮ থেকে ৬০ শব্দ উচ্চারণ করে ১৯ মিনিটের মধ্যে এই বক্তব্য শেষ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সম্প্রচার তত্ত্বে প্রতি মিনিটে ৬০টি শব্দ আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয়। ১১০৭ শব্দের বক্তৃতায় কোনো বিরক্তিকর পুনরাবৃত্তি ছিল না। কোনো অপ্রয়োজনীয় বক্তব্য ছিল না, কেবল মূল বিষয়গুলো ছিল।

৭ই মার্চের ভাষণে মূলত বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের সামরিক জান্তার শোষণ, পরাধীনতা ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ৭ই মার্চের ভাষণের ১৮ দিন পর শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে এবং ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে আসে বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। পৃথিবীর মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের। বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন ‘পোয়েট অব পলিটিক্স’ তথা ‘রাজনীতির কবি’।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বলা হয় অমর কবিতা। এই ভাষণের অনন্য শব্দচয়ন, অনুপম বাকশৈলী, ঋজু উপস্থাপনা ও আবহমান বাংলার লোকজ শব্দসম্ভার মুক্তিপাগল মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকর্ষণ করে। বাঙালির হাজার বছরের পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে স্বাধীনতার সোনালি সোপানে উত্তরণের পথে ৭ই  মার্চের ভাষণটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করে।

আজ একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি আমরা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের মন্ত্রই আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। ৭ই মার্চের সঞ্জীবনী শক্তি বিশ্ব দরবারে বাঙালিকে মর্যাদায় আসীন করেছে, দিয়েছে মাথা উঁচু করে চলার অদম্য শক্তি। আজ বিশ্বব্যাপী এটা প্রমাণিত- বাঙালি জাতিকে দাবায়ে রাখা যায় না...