logo
আপডেট : ৭ মার্চ, ২০২২ ১৭:৫৯
ধর্ষণের অভিযোগ: এসপি মোক্তারের জামিন মঞ্জুর
নিজস্ব প্রতিবেদক

ধর্ষণের অভিযোগ: এসপি মোক্তারের জামিন মঞ্জুর

নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোক্তার হোসেন জামিন পেয়েছেন।

সোমবার (৭ মার্চ) ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াতের আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন চান তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আফরোজা ফারহানা আহমেদ ভোরের আকাশকে জানান, এ সময় তার নারী সহকর্মী এজলাসে হাজির থেকে জামিনে আপত্তি নেই বলে জানালে বিচারক জামিন দেন। আলোচিত এ মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেন বিচারক। ১১ এপ্রিল অভিযোগের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

এ সময় মোক্তারের আইনজীবী কাজী নজিব উল্যাহ হীরু তার পক্ষে শুনানি করেন।

জামিন ‍শুনানিতে আইনজীবী বলেন, ওই নারীর সঙ্গে এসপি মোক্তারের ৬০ লাখ টাকার দেনমোহরে বিয়ে হয়েছিল। এই টাকা তিনি এর আগে পরিশোধও করেছিলেন। ভুল বুঝাবুঝির কারনে এ মামলা হয়েছে। জামিনে বাদিনীর আপত্তি নেই, তাই জামিন চাচ্ছি।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায় দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মোক্তারের বিরুদ্ধে বিয়ের আশ্বাসে ফুসলিয়ে এবং নারী সহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করা হয়েছিল অভিযোগপত্রে।

গত বছরের ১২ আগস্ট ঢাকার ৭নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন তার সহকর্মী ওই পরিদর্শক। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আবেদনটি উত্তরা পূর্ব থানাকে মামলা হিসেবে (এফআইআর) গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়।

মামলা দায়েরের সময় বাগেরহাট জেলার দায়িত্বে ছিলেন মোক্তার। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে ছুটিতে যান তিনি। তবে কত দিনের ছুটিতে যান, সেটি তখন জানা যায়নি।

মামলাটির তদন্ত শেষে গত ৩০ জানুয়ারি মোক্তারকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক জসিম উদ্দিন। মামলায় সাক্ষী ২০ জন।

অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা জাকির হোসেন উল্লেখ করেন, মামলার বাদী বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা। তিনি ২০১৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। পরের বছর ২০১৯ সালের মে মাসে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান মোক্তার হোসেন। তারা ছাড়াও অন্যান্য কর্মকর্তা মিশনে কর্মরত ছিলেন। মিশনে বাংলাদেশি পুলিশ সুপারদের মধ্যে কেবল বাদী ও আসামি ভিআইপি ’অ্যাকোমোডেশন ক্যাম্পে’ থাকতেন। মামলার বাদী ২০২০ সালের ৩০ জুন মিশন শেষে দেশে ফেরেন। মোক্তার হোসেন মিশন শেষে দেশে ফেরেন ২০২১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি।

বাদীর অভিযোগ, (মিশনে থাকাকালে) ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর মোক্তার হোসেন তার আবাসিকে তাকে ধর্ষণ করেন। দু’দিনের মাথায় ২২ ডিসেম্বর ফের ধর্ষণ করেন তাকে। ২০২০ সালের ৩০ জানুয়ারি তাকে ভুল বুঝিয়ে,কলেমা পড়িয়ে মৌখিকভাবে বিয়ে করেন মোক্তার। পাশাপাশি বাংলাদেশে ফিরে বিয়ে রেজিস্ট্রি করার আশ্বাস দিয়ে তাকে ফের ধর্ষণ করেন। একইভাবে ২০২০ সালের ২৬ জুন থেকে ৩০ জুন সুদানের খার্তুমের হোটেল শ্যামলোতে তাকে ধর্ষণ করেন মোক্তার।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে বলেন, বাদীর অভিযোগে উল্লেখিত ঘটনাস্থল দেশের বাইরে হওয়ায় সরেজমিনে পরিদর্শন করা এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। মিশনে সংগঠিত ধর্ষণের বিষয়ে একই সময়ে কর্মরত দেশের পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসা করা হলে কেউ ঘটনার বিষয়ে অবগত নন মর্মে জবানবন্দি দেন।

অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, মোক্তারের পরিবার ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করছিল। এ অবস্থায় বাদীর সঙ্গে আসামির হোটেলের অবস্থান তার (ধর্ষণের) অভিযোগকে সমর্থন করে। দু’জনই বিবাহিত। মোক্তার হোসেন এর প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে বাদী ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তার স্বামীকে ডিভোর্স দেন। এরপর তিনি ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল স্ত্রীর স্বীকৃতি দাবিতে মোক্তারের বাসায় গেলে তাকে নাজেহাল করা হয়।

মামলার তদন্তে সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রকাশ পায় যে, মোক্তার হোসেন বাদীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে দীর্ঘদিন তার সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা করেন, যা ধর্ষণের শামিল। সব তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মামলার বাদীকে আসামি মোক্তারের ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই মোক্তারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হলো।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ সালে বাদী ও মোক্তার হোসেন দু’জনই সুদানে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে মোক্তার হোসেন বাদীর বাসায় তার ব্যবহৃত গাড়ির চাবি চান। বাদী চাবি ইউনিফর্মের পকেট থেকে আনতে গেলে মোক্তার হোসেন পেছন থেকে তাকে জাপটে ধরেন এবং ধর্ষণ করেন। পরে এ ঘটনা কাউকে না জানাতে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। এর দু'দিন পর ২২ ডিসেম্বর মোক্তার হোসেন পুনরায় আগের ঘটনা ভুল বোঝাবুঝির কথা বলে বাদীর বাসায় যান। কিন্তু ওইদিনও বাদীকে তিনি ধর্ষণ করেন। এ ঘটনাও কাউকে না জানাতে বাদীকে হুমকি দেন মোক্তার হোসেন। যদি বাদী কাউকে ধর্ষণের ঘটনা জানান, তাহলে তার ক্ষতি করার হুমকিও দেওয়া হয়।