logo
আপডেট : ৭ মার্চ, ২০২২ ২২:০৮
‘অষ্টধা’ গ্রন্থে জীবনের গল্প .....
ইফ্ফাত শরীফ

‘অষ্টধা’ গ্রন্থে জীবনের গল্প .....

‘সাহিত্যকে আমরা বলি জীবনের দর্পণ। নতুন দিকদর্শনও। আইরিশ কবি ও নাট্যকার অস্কার ওয়াইল্ডের একটা কথা লিখতে বসলেই আমার সব সময় মনে হয়। কথাটা হলো: ‘Literature always anticipates life. It does not copy it but molds it to its purpose’(জীবন সবসময় সাহিত্য প্রত্যাশা করে। সাহিত্য কখনো জীবনকে অনুলিপি করে না বরং এটি তার উদ্দেশ্য অনুসারে তৈরি করে)। আমরা যা লিখি তার সবই হয়তো সাহিত্যের এই সংজ্ঞায় পড়বে না কিন্তু জীবনঘনিষ্ঠ সাহিত্যে অস্কার ওয়াইল্ডের এই বর্ণনার সব বৈশিষ্ট্যই থাকতে পারে।

এই সাহিত্যগুলো জীবনের অলিগলিতে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোকেই যে শুধু বর্ণনা করে গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধে তা-ই না বরং এ ধরনের সাহিত্যে আর্থসামাজিক আর রাজনৈতিক যে ঘটনাগুলো প্রতিদিনই ঘটছে, সেগুলোকেই করে তুলছে সাহিত্যের ক্যানভাস। আর তাতেই সেই গল্প কবিতা বা প্রবন্ধ ব্যক্তিকেন্দ্রিক জীবনাখ্যান না হয়ে, হয়ে যাচ্ছে পুরো সমাজেরই প্রতিফলন’।

খন্দকার নাইমুল ইসলামের আটটি প্রবন্ধ, আটটি প্রগল্প নিয়ে লেখা ‘অষ্টধা’ বইটিতে এভাবেই সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন। বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘জাগৃতি’ প্রকাশনীতে বইটি ত্রিশ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৮০টাকায়।
‘জাগৃতি’ প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি মো. হাসানের সাথে কথা হয় ভোরের আকাশের।

তিনি বলেন, আমাদের স্টলে নতুন বইগুলো পাঠকরা বেশি পছন্দ করছেন। তবে পাঠকরা বেশি খুঁজছেন ইতিহাসের বই, উপন্যাস, গল্পের বই, ভৌতিক, সায়েন্সফিকশনের বইগুলো। তবে নতুন গল্পের বইয়ের মধ্যে ‘অষ্টধা’ বইটি পাঠকপ্রিয়তা ভালই পাচ্ছে। এই ধরনের বইগুলো লেখকরা বেশি নিচ্ছেন।

এবারের বইমেলায় বিক্রির শীর্ষে উপন্যাস। তবে অধিক বিক্রিতে গল্পের বইয়ের স্থান দ্বিতীয়। বইমেলার বিশ দিনে এখন পর্যন্ত নতুন গল্পের বই এসেছে ২৫২টি। পাঠকরা উপন্যাসের পাশাপাশি গল্পের বই বেশি পছন্দ করছে বলে জানিয়েছেন স্টলগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা। এর কারণ হিসেবে লেখক ও প্রকাশকরা বলেছেন, গল্প অল্প সময়ে পড়ে শেষ করা যায় বলে পাঠকদের পছন্দের তালিকায় গল্পের বই এগিয়ে।

‘অষ্টধা’ বইটিতে আরো বলা হয়েছে, ‘প্রবন্ধ আর গল্প আমাদের জীবনের সব সুখ, দুঃখ, কষ্ট ভালোলাগার সাথেই জড়িত। তবুও এই বইয়ের নাম যে ‘অষ্টধা’ হলো সেটা বইয়ের সীমিত সাহিত্যিক সীমানার জন্যই। বইয়ের প্রবন্ধ আর গল্পগুলো আমাদের দেশের, আমাদের জীবনের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের সাহিত্য চিত্র।’

‘অষ্টধা’ বইটি সম্পর্কে লেখক খন্দকার নাইমুল ইসলামের সঙ্গে ভোরের আকাশের কথা হয়। তিনি বলেন, ২০২২ সালের বইমেলায় জাগৃতি প্রকাশনীতে আটটা প্রবন্ধ আর আটটা প্রগল্প নিয়ে আমার বই ‘অষ্টধা’ প্রকাশ হয়েছে। গতবছর চৈতন্য থেকে প্রকাশিত আমার ‘আকাশ গঙ্গার তারা’ বইটাতে পাঁচ মিশালি কিছু গল্প ছিল। প্রথম বই হিসেবে ওখানে নতুন কিছু করার কথা ভাবিনি। নিজের লেখা সম্পর্কে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্যারের বলা কথাটা আমি গুরুত্বের সাথেই মনে রেখেছি। সেটা হলো- পড়তে হবে অনেক কিন্তু শুধু গল্প উপন্যাস বা কবিতা নয়। জানার জন্য বেশি বেশি পড়তে হবে ইতিহাস, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, ভূগোল সব কিছুই। গল্প নিয়ে আলাদা ভাবে কিছু বলার নেই। শুধু বলি, দেশের অর্থসামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমার অনেক ভাবনা চিন্তা থেকেই গল্পগুলো লেখা। পাঠকদের ভালো লাগলেই আমার নতুন কিছু করার চেষ্টা সফল হয়েছে ভাববো।

সারাবছরই মানুষ কম বেশি বই কেনে। তবে মেলা থেকে বই কেনার মধ্যে ভিন্ন একটা মজা আছে। বইমেলায় যারা বই কিনছেন, তাদের অধিকাংশকে পুরোনো বই অথবা পুরোনো বইয়ের নতুন কোনো সিরিজ বেশি কিনতে দেখা গেছে। গতকাল রোববার বইমেলার বিশতম দিনে সরেজমিনে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যুবক যুবায়ের আহমেদ মিরপুর থেকে বইমেলায় এসেছেন পছন্দের বই কিনতে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, কিছু রাইটার আছে যাদের লেখা বইগুলো সম্পর্কে অনেক শুনেছি। কিন্তু কখনো পড়া হয়ে ওঠেনি। সে বইগুলো খুঁজতে মেলায় এসেছি। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মে এখন আর বইপ্রেমী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে তারা কিন্তু বইয়ের সাহিত্যটাকে বুঝে। বইয়ের এই অনুভূতিগুলোকে তারা খণ্ড খণ্ড আকারে নিজেদের জীবনের সঙ্গে নিয়ে যায়।

তারা পুরো বই পড়তে এখন আর পছন্দ করে না। বই থেকে খুঁজে অথবা ইন্টারনেট থেকে এমন কিছু লাইন বের করে যেগুলো তাদের জীবনের সাথে মিলে যায়। তরুণ প্রজন্ম এখন আর বইগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। তারা বই পড়ার বদলে বড় বড় লেখকদের উক্তিগুলো যেগুলো তাদের জীবনের সাথে মিলে যায় সেগুলো স্টেটাস আকারে শেয়ার করে অনুভূতি প্রকাশ করে।

এদিকে প্রকাশকরা বলছেন, বইমেলায় পাঠকের থেকে দর্শনার্থী বেশি। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের থেকে ছুটির দিনগুলোতে যেমন দর্শনার্থীর ভিড় থাকে তেমনি বইও বেশি বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা।