logo
আপডেট : ৮ মার্চ, ২০২২ ০৯:০৪
সমহিমায় উদ্ভাসিত ৭ নারী বিচারপতি
এম বদি-উজ-জামান

সমহিমায় উদ্ভাসিত ৭ নারী বিচারপতি

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে থাকা ৯৩ জন বিচারপতির মধ্যে নারী বিচারপতির সংখ্যা সাতজন।

ওরা সাতজন; সমহিমায় উদ্ভাসিত। বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের নারী সাত বিচারপতি তারা। বিচারাঙ্গনের মতো কঠিন জায়গায় দায়িত্ব পালনে তারা নির্ভিক। নিজেদের মেধা, প্রজ্ঞা দিয়ে সমাজের উচ্চস্তরে প্রতিষ্ঠিত। তারা হলেন বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি কাশেফা হোসেন, বিচারপতি ফাতেমা নজিব ও কাজী জিনাত হক।

এই সাতজনের মধ্যে বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ আপিল বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন। আর হাইকোর্ট বিভাগে দায়িত্বরত ছয়জনের মধ্যে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ছুটিতে। তাই তিনি আর বেঞ্চে বসছেন না। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে থাকা ৯৩ জন বিচারপতির মধ্যে নারী বিচারপতির সংখ্যা সাতজন।

দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে সর্বমোট ১০ নারী বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নারীদের অগ্রজ ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তিনি এখন অবসরে। তবে তিনি এখন নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ পাওয়া নারী বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি নাজমুন আরা সুলাতানসহ তিনজন এখন অবসরে। স্বাধীনতার ২৮ বছর পর সর্বপ্রথম ২০০০ সালের ২৮ মে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। এর দুই বছর পর ২০০২ সালের ২৮ মে হাইকোর্টে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই তিনি অবসরে যান। এরও আগে তিনি ছিলেন নিম্ন আদালতে প্রথম নারী বিচারক। তিনিই ছিলেন দেশের প্রথম নারী বিচারক ও বিচারপতি।

অবসর নেওয়া অপর দুই বিচারপতি হলেন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহান। এই দুজনের মধ্যে জিনাত আরা আপিল বিভাগ থেকে অবসরে যান। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে তিনি নিয়োগ পান। তিনি ছিলেন আপিল বিভাগে দ্বিতীয় নারী বিচারপতি।

আর বিচারপতি সৈয়দা আফসার জাহানকে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর তাকে দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর আর তাকে স্থায়ী করা হয়নি। ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর ছিল তার বিচারক হিসেবে শেষ কর্মদিবস।

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী

বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ২০০২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তাকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুই বছর পর ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি আইনজীবী থেকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ২০০৪ সালের ২৩ আগস্ট তিনি হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিযুক্ত হন। ২০০৬ সালে তিনি হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি আইনজীবী থেকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি নাইমা হায়দার

বিচারপতি নাইমা হায়দার সাবেক বিচারপতি মরহুম বদরুল হায়দার চৌধুরীর মেয়ে। তিনি ২০০৯ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১১ সালের ৬ জুন হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি আইনজীবী থেকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ

বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ২০১০ সালের ১৮ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এর দুই বছর পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি নিম্ন্ন আদালতের বিচারক (জেলা জজ) থেকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি কাশেফা হোসেন

বিচারপতি কাশেফা হোসেন ২০১৩ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান কাশেফা হোসেন। তিনি আইনজীবী থেকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি ফাতেমা নজিব

বিচারপতি ফাতেমা নজিব ২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগে দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি নিম্ন আদালতের বিচারক (জেলা জজ) থেকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

বিচারপতি কাজী জিনাত হক

বিচারপতি কাজী জিনাত হক ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগে দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। দুই বছর পর তিনি স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি আইনজীবী থেকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

শুধুই নারী বিচারক নন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইন পেশায়ও নারীর উপস্থিতি লক্ষণীয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সাড়ে ৮ হাজার আইনজীবী সদস্য রয়েছেন। এদের প্রায় অর্ধেকই দেশের নিম্ন আদালতগুলোতে নিয়মিত আইন পেশায় নিয়োজিত। আর সুপ্রিম কোর্টে (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) ৫ হাজারের কাছাকাছি আইনজীবী পেশায় আছেন। এদের মধ্যে ১ হাজারেরও বেশি নারী আইনজীবী রয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে নারীদের মধ্য থেকে আরো বেশি সংখ্যক বিচারপতি নিয়োগের দাবি দিন দিন জোরালো হচ্ছে।