logo
আপডেট : ৮ মার্চ, ২০২২ ০৯:২৪
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় উপেক্ষিত নারীর অধিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় উপেক্ষিত নারীর অধিকার

১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। প্রতীকী ছবি

আজ ৮ মার্চ, ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। ‘টেকসই আগামীর জন্য; জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন কর্মসূচিতে দিনটি উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বিশ্বের সব নারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও নারীর মৌলিক মানবাধিকার স্বাস্থ্যসেবা; বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবায় নারীদের মতামতের অধিকার নেই। অথচ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার, নারীর অধিকার। একজন নারীর কখন বিয়ে হবে, কার সঙ্গে বিয়ে হবে, কখন সন্তান হবে, কতজন সন্তান হবে, পরিবার-পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার এবং নিরাপদ মাতৃত্ব এগুলো নারীর সাধারণ অধিকার। কিন্তু সচেতনতার অভাবে প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে নারীর অধিকারের কোনো গুরুত্ব নেই। তাই বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে সমাজের সবার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

বিভিন্ন সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে, সারা বিশ্বে করোনার কারণে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে আগামী দিনগুলোয় শিশু ও মাতৃমৃত্যু বেড়েছে। কারণ পরিবার-পরিকল্পনা সেবার হার প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। ইতোমধ্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার কমেছে ও বেড়েছে অনিরাপদ গর্ভপাত। প্রসব-পরবর্তী পরিবার-পরিকল্পনা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ সময়ে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতনের হার বেড়েছে।

স্ট্রেনদেনিং ফ্যামিলি প্লানিং সার্ভিস থ্রু অ্যাডভোকেসি ইনিশিয়েটিভের ফোকাল পার্সন মনজুন নাহার বলেছেন, করোনায় দীর্ঘদিন থেকে বিপর্যস্ত প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা। এখন করোনা কমেছে তাই শিশুর জন্ম ও পরবর্তী সময়ে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের কাছে পৌঁছাতে হবে।

প্রত্যন্ত এলাকার মায়েদের নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে অথবা টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা নিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য জীবন রক্ষাকারী সেবা ও জোগানের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে। একইসঙ্গে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে নিজস্ব মতামত প্রদান নারীর অধিকার। সচেতনতার মাধ্যমে নারী-পুরুষ তথা সমাজের সবার এ বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।

প্রেক্ষাপট : ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ এই দিনটির শুরু। সে সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি সুঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেপ্তার হন বহু নারী। কারাগারে নির্যাতিত হন অনেকেই।

তিন বছর পরে ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় ‘নারী শ্রমিক ইউনিয়ন’। ১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।

১৯১০ সালের এ দিনে ডেনমাকের্র কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারীবর্ষে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা শুরু করে। এর দু’বছর পর ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ দিনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

সারা দেশে নানান কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, সমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীসহ বিশেষ ক্রোড়পত্র ও স্মরণিকা প্রকাশিত হবে। সরকারি টেলিভিশন ও বেতার এবং বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। আজ বেলা ১১টায় ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ৫ জয়িতাকে সম্মাননা জানানো হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। প্রধান অতিথি শ্রেষ্ঠ ৫ জয়িতার হাতে সম্মাননা পদক, ক্রেস্ট ও ১ লাখ টাকার করে চেক তুলে দেবেন।

এ বছর অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী রাজশাহী বিভাগের সিরাজগঞ্জ জেলার সানজিদা আক্তার শিমু। শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. হোসনে আরা আরজু। সফল জননী হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগের খোশনাহার বেগম। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে বরিশাল বিভাগের জেসমিন আক্তার আর সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখায় রংপুর বিভাগের রোকেয়া বেগম।