logo
আপডেট : ৮ মার্চ, ২০২২ ১০:৫১
বেতন বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা
শাকিল মুরাদ, শেরপুর

বেতন বৈষম্যের শিকার নারী শ্রমিকরা

শেরপুরে কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা

সামাজিক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বছরের পর বছর বিভিন্ন খাতে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন শেরপুরের নারীরা। একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও সমান বেতন পান না এখানকার নারী শ্রমিকরা।

নারীর অধিকার, মজুরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমঅধিকার নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন সভা-সেমিনার হয়ে থাকে। কিন্তু দেশে নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য এখনো কমেনি। পুরুষের সমপরিমাণ কাজ নারী শ্রমিকরাও করেন; কিন্তু মজুরির বেলায় নারীরা পান অর্ধেক। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোনো ইতিবাচক ফল পাচ্ছেন না তারা।

বছর ঘুরে আসে নারী দিবস। তখন শুরু হয় নারী শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে। কিন্তু তাদের মজুরির কোনো পরিবর্তন হয় না।

নারী নেত্রীদের অভিযোগ, শেরপুরে এখনো নারী-পুরুষদের বৈষম্য দূর হয়নি। বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন খাতে নারীরা শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একজন পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করেও তারা সমান বেতন পাচ্ছেন না।

শেরপুর সদর, নালিতাবাড়ী ও ঝিনাইগাতী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, নারী শ্রমিকরা ধানের চারা রোপণ ও পরিচর্যা, পাথর ভাঙা, চাতাল কল, ইটভাটা ও মাটিকাটার কাজসহ বিভিন্ন কাজ করছেন।
সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করলে এক দিনের কাজ ধরা হচ্ছে। এই একদিনের বেতন একজন পুরুষ শ্রমিক পাচ্ছেন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এই হিসাবে একজন নারী শ্রমিকের সমান বেতন পাওয়ার কথা। কিন্তু একজন নারী শ্রমিক পাচ্ছেন ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা।

শেরপুরে পাথর ভাঙার কাজ করছেন নারী শ্রমিকরা

দুঃখজনক হলেও কর্মক্ষেত্রে পুরুষ শ্রমিকরা যেখানে মোট কর্মঘণ্টার (একদিন) এক থেকে দেড় ঘণ্টা কম কাজ করেন, সেখানে নারী শ্রমিকরা খাওয়ার সময় বাদে বিশ্রামের সুযোগও পান না। ছোট ছোট বাচ্চাদের কোলে নিয়ে বহু নারী শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। এমনকি নারীরা নির্ধারিত কর্মঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত কাজ করলেও তার মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রতিদিনই পুরুষের পাশাপাশি সমানতালে কাজে অংশ নিচ্ছেন নারী শ্রমিকরা, কিন্তু তারা মজুরি সমান পাচ্ছেন না। অভাব অনটনের মধ্যে বৈষম্য উপেক্ষা করে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। অসুস্থ হলে কিংবা কাজে একটু ত্রুটি হলে বেতন কাটা থেকে শুরু করে কাজ হারাতে হচ্ছে তাদের।

শেরপুর সদরের চাতাল কলে কাজ করা শ্রমিক সরুফা বেগম বলেন, ‘আমরাতো মইরি গেছি, টেহা পয়সে কম দেয় মালিকরা। গরিব মানুষ তাই কম টেহা দিয়েই কাজ করি। মালিকদের কাছে টেহা বেশি চাইলে কাজে আবার না করে। এজন্য যা পাই তা দিয়ে কোনো মতে সংসারের হাল ধরি।’

শেরপুর সদরের একটি ইটভাটার শ্রমিক আছমা বেগম বলেন, ‘পুরুষের চাইতে টাকা আমাদের কম দে, যদি সরদারকে বলি টাকা কম কেনো, তখন সরদার বলে কালকে থেকে যেন ভাটায় না আসি, এজন্য কিছু কই নে। যা দে, তাই নেই।’

ঝিনাইগাতী উপজেলার দুধনই গ্রামের মাটিকাটার শ্রমিক হনুফা বেগম বেগম, ‘আমি সহাল (সকাল) ৭টার সময় মাটি কাটবার (কাটতে) যাই, বিহার (বিকাল) ৫টা পর্যন্ত মাটি কাটি। আমার বেতন পুরুষের চেয়ে কম। কাম (কাজ) সমান করি কিন্তু তারা (মালিকরা) টেহা (টাকা) কম দেয়। আমি গরিব মানুষ, তাই ওই টেহাই (টাকা) নিই, না নিলে খামু কি, চলমু কি করে, পোলাপান (সন্তান) আছে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শেরপুর জেলা শাখার সভানেত্রী জয়শ্রী দাস লক্ষী দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর ক্ষমতায়ন ও পদায়নও হয়েছে, নারী-পুরুষ সমন্বয়ে কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়েও যাচ্ছে। নারীরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন, তারা কাজে ফাঁকি দেন না। কিন্তু তাদের মজুরি বৈষম্য এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই আমি সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই যেনো এই মজুরি বৈষম্য দূর হয়।’

জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা চেয়ারম্যান নাসরিন রহমান বলেন, ‘একজন পুরুষের সমান কাজ করেও একজন নারী সমান বেতন পান না। এটা খুবই দুঃখজনক। দীর্ঘদিন এমন অবস্থা থাকলেও শুরু বিশ্ব নারী দিবসে বিষয়টি সামনে আসে। সমাজে নারী ও পুরুষের মজুরি বৈষম্য দূর হয়ে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হোক সেই প্রত্যাশা করি।’