logo
আপডেট : ৮ মার্চ, ২০২২ ১২:১৮
আন্তর্জাতিক নারী দিবস
চাই সমতাভিত্তিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা
নিজস্ব প্রতিবেদক

চাই সমতাভিত্তিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা

`আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ বিশ্বব্যাপী নারী মুক্তির দিন। সার্থকতার পথে প্রতিবন্ধকতাকে অপসারণের মাধ্যমে আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নের অঙ্গীকারের দিন ৮ মার্চ। সর্বোপরি, নারী আন্দোলনকে অগ্রসর করার লক্ষ্য নির্ধারণের দিন এটি।

নারীর মানবাধিকার ইস্যুটি প্রচ্ছন্নভাবে প্রস্ফুটিত ছিল না শুরুতে। নারী দিবস উত্থাপনের মধ্য দিয়ে নারীর অধিকারের ইস্যুটি ক্রমে বিকশিত হয়েছে। নারী দিবস প্রথম উদযাপিত হয় ১৯১০ সালে জার্মানিসহ কয়েকটি দেশে। এরপর ১১২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সমাজের অভ্যন্তরীণ বিকাশ এবং মুক্তির ক্ষেত্রে শক্তি অর্জনে নারী আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। একই সঙ্গে নারীজীবনের সংকট-সমস্যাও পরিবর্তিত হয়েছে। নারী আন্দোলনের পথ ও কর্মসূচিতে এসেছে নতুন ধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি।

নারীর জন্য সার্বিক পারিপার্শ্বকতা  শুরুতে মসৃণ ছিল না মোটেই। সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নারী আজকের অবস্থানে অধিষ্ঠিত। বিশ্বব্যাপী নারীরা আজ পিছিয়ে নেই, পশ্চাৎপদ নয় বাংলার নারীরাও।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে মুক্ত স্বদেশের মাটিতে ১৯৭২ সালে যে নতুন সংবিধান রচিত হয়েছিল, সেই বাহাত্তরের মহান সংবিধানে নারী অধিকার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিধান করে যান বঙ্গবন্ধু। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রিসভা ও সংসদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল পদে নারীদের অধিষ্ঠিত করে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি।

নারী-পুরুষের বৈষম্য হ্র্রাস করে সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আজ বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্র্রাসসহ বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ বর্তমানে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিশ্বে রোল মডেল।

নারী শিক্ষা, নারীর স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ, বাল্য বিবাহ, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, নারীর প্রতি সহিংসতা, পারিবারিক সহিংসতা রোধে আইন প্রণয়ন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান, নারী পাচার রোধে আইন, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার, ন্যাশনাল হেল্প লাইন ১০৯-সহ নারীদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে নারীরা বদ্ধ প্রকোষ্ঠ থেকে বের হয়ে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হয়েছে।

এটা সত্য যে, নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির শতভাগ পরিবর্তন ঘটেনি এখনো। লিঙ্গীয় বৈষম্যের কারণ ও প্রভাব বিষয়ে সমাজের ধারণাটি এখনো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠেনি পুরোপুরি। নারীর প্রতি বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ঘোষিত ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা, নারী ও পুরুষের সম্মিলিত অগ্রযাত্রার অঙ্গীকারই গড়ে তুলতে পারে সমতার বিশ্ব।

নারী-পুরুষের সম্মিলনে বহমান থাকে প্রকৃতি। সমাজ-সভ্যতাকে বহমান করার জন্যও প্রয়োজন নারী-পুরুষের সম্মিলিত অভিযাত্রা। প্রাচ্যের নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন যথার্থই বলেছেন- ‘মানুষের একটি অঙ্গ অচল হইলে সে কিভাবে উঠিয়া দাঁড়াইবে। সমাজের একটি অঙ্গ দুর্বল হইলে সে সমাজও পঙ্গুত্ব অর্জন করিবে? ’

শতাধিক বছর ধরে বহমান আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আন্দোলন ক্রমান্বয়ে পরিণত ও পুষ্ট হয়ে চলেছে। এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘নারীর সুস্বাস্থ্য ও জাগরণ’। আবেদিত সমতার বিশ্বে বাংলাদেশও সমভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নারী-পুরুষের যৌথ অংশগ্রহণ ও অবদানে ‘অগ্রসরমাণ বাংলাদেশ’ আজ সর্বত্রই দৃশ্যমান। লিঙ্গবৈষম্যের কালিমামুক্ত সমতার বিশ্বে বাংলার নারীদের অগ্রযাত্রার ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক, নারী দিবসে প্রত্যাশা এটাই।

নারীর প্রতি বিদ্যমান দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ঘোষিত ‘ভিশন-২০৪১’ বাস্তবায়নে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ভূমিকা রাখতে হবে। কেননা, নারী ও পুরুষের সম্মিলিত অগ্রযাত্রার অঙ্গীকারই গড়ে তুলতে পারে সমতার বিশ্ব।