logo
আপডেট : ৮ মার্চ, ২০২২ ১৩:৩০
বইমেলা প্রতিদিন
নারী লেখকদের জয়জয়কার
ইফ্ফাত শরীফ

নারী লেখকদের জয়জয়কার

নারী দিবসটিকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই বইমেলায় নারী লেখকদের জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। ছবি- ভোরের আকাশ

‘বাস্তবতার নিকষ আঁধারে দাঁড়িয়ে এক নারী দেখেছে জীবনকে। অনুভব করেছে নতুনভাবে। উপলব্ধি করেছে, জটিল ও বন্ধুর দীর্ঘ এক যাত্রাপথের নাম জীবন। অতঃপর নিজেকে নির্মাণে ব্রতী হয়েছে সে। নির্মাণের এ পথটি কুসুমাস্তীর্ণ তো নয়ই, বরং কণ্টকাকীর্ণ। পথের বাঁকে বাঁকে সংগ্রাম, ত্যাগ ও তিতিক্ষা। জীবনপথের এ যাত্রাই ‘মহাযাত্রা’। ভেঙে গুঁড়িয়ে যাওয়ার পর নবসৃষ্টির গল্প মহাযাত্রা। নিবুুনিবুু প্রদীপ শিখার জ্বলে ওঠার গল্প। মহাযাত্রা ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখির মতো এক নারীর জেগে ওঠার গল্প।’

লেখক মৌরি মরিয়ম এভাবেই তার লেখা ‘মহাযাত্রা’ বইটিতে নারীদের প্রদীপ শিখার মতন জ্বলে ওঠার গল্প তুলে ধরেছেন। তাম্রলিপি প্রকাশনীতে এ বছর প্রকাশিত ‘মহাযাত্রা’ দ্বিতীয় খণ্ডটি ২৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকায়।

আজ মহান নারী দিবস। নারী দিবসটিকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই বইমেলায় নারী লেখকদের জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। এমন অনেক নারী লেখক আছেন যাদের বই ইতোমধ্যে কয়েকটা মুদ্রণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে আছেন সেলিনা হোসেন, মৌরি মরিয়ম, ওয়াসিকা নুযহাত, রুমানা বৈশাখির মতো লেখকরা। লেখক হিসেবে নারীরা বইমেলায় একটা আলাদা স্থান করে নিয়েছেন। বইমেলার প্রতিটা স্টলে স্টলেই কমবেশ নারী লেখকদের বই পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি নারী প্রকাশকের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নারী দিবসে নারী লেখক মৌরি মরিয়মের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি বলেন, এ বছর মেলায় আমার তিনটি নতুন বই এসেছে। বইগুলো তাম্রলিপি, অন্য প্রকাশ এবং অন্যধারাতে পাওয়া যাচ্ছে। নতুন কোনো লেখক যখন তার বই প্রকাশ করতে যায় তখন তার অনেক চ্যালেঞ্জ এর মুখে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে প্রকাশকরা তাদের লেখা প্রকাশ করতে চান না। এ কারণেই নতুন লেখকদের প্রকাশক পেতে অনেক সমস্যায় পরতে হয়। শুরুতে এমন সমস্যায় আমাকেও পড়তে হয়েছিল। আমি যখন প্রথম বই প্রকাশ করতে যাই তখন আমাকে বলা হতো আপনার কয়জন পাঠক আছে। আপনার আগে কোন বই ছিল কিনা।

তিনি বলেন, তবে আমি মনে করি, নতুনদের সুযোগ দেওয়া দরকার। না দিলে তাদের পাঠকপ্রিয়তা কীভাবে পাবে। আমি কখনো নারী-পুরুষকে আলাদাভাবে দেখি না। সব কাজই সবার জন্য এরকমটাই আমি ভাবতে পছন্দ করি। যেকোনো কাজেই নারী-পুরুষ উভয়েরই অনেক ধরনের বাধা আসে। এসব বাধা কাজেরই একটা ভাগ বলে আমি মনে করি।

আমাদের দেশে বড় বড় যত লেখক আছেন তার বেশির ভাগই পুরুষ। পুরুষ লেখকরা যেভাবে নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে তাদের লেখায় তুলে ধরছেন। একইভাবে নারী লেখকের সংখ্যা যদি বৃদ্ধি পেত তাহলে তারাও হয়তো পুরুষদের সম্পর্কে তাদের লেখায় ফুটিয়ে তুলতেন। এ কারণেই হয়তবা সাহিত্যে পুরুষদের সম্পর্কে তেমন একটা লেখা পাওয়া যায় না।

নারী লেখক কম হওয়ার কারণ হিসেবে লেখকরা বলছেন, আগে একটা সময় প্রকাশকরা নারী লেখকদের বই ছাপানোর ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিল। তাই নারীরা নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে নিজেদের বই ছাপাতেন। এমন অনেক নামিদামি নারী লেখক ছিলেন যারা তাদের জীবনের প্রথম প্রকাশিত বইগুলো নিজের অর্থায়নে বের করেছিলেন। তবে অতীতে নারীদের নিজের বই ছাপানোর সক্ষমতাটা তেমন একটা ছিল না। এ কারণেই নারী লেখক কম ছিলেন বলে মনে করছেন লেখকরা।

তবে এখন নারীরা অনেক বেশি স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নারীরা এখন পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাকরি করছেন, পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করছেন। বর্তমানে নারীরা তাদের প্রতিভা প্রকাশ করার সুযোগ পাচ্ছেন। এ কারণেই দিন দিন নারী লেখকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পাশাপাশি নারী পাঠকদের সংখ্যা ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগে থেকে বই পড়ার অভ্যাস আছেÑ এমন নারীরা বিশেষ করে মধ্যবয়সি নারীরা পাঠক হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন।

বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেনের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। নারী দিবস নিয়ে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, নারী দিবস আমার কাছে আলাদা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। মেলায় নারীদের প্রচুর বই আসছে। তাদের আলাদা প্রকাশনা সংস্থা আছে যেখানে তারা অনেকেই সফল। সব মিলিয়ে বাংলা একাডেমির আয়োজনে এই বইমেলা নারীদের জন্য প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে উঠেছে অনেক আগে থেকেই।

শায়লা রহমান তিথি ‘ঝুমঝুমি’ প্রকাশনীর প্রকাশক। ইতোমধ্যে সফল নারী প্রকাশক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। নারী দিবস উপলক্ষে কথা হয় এই নারী প্রকাশকের সঙ্গে।

তিনি বলেন, প্রকাশনা সেক্টরে যে নারীরা কাজ করবেন এই বিষয়টা এখনো অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। প্রকাশক হিসেবে ছেলেদের কে যতটা সহজে মেনে নিচ্ছেন। আমি নারী প্রকাশক হয়ে তার অনেকটা ঘাটতি দেখেছি। অনেক সময় মানুষের তাকানো, কথা বলার পদ্ধতি এবং আমাদের আলাদা চোখে দেখাটা নিজের কাছে কিছুটা অস্বস্তি মনে হয়। সব সেক্টরেই মেয়েদের মেনে নিতে পারছে না বিষয়টা কিছুটা হলেও এমন দেখায়। তবে আমাদের সমাজের এমন দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হবে। তবে এখন নারী প্রকাশক অনেক আছে। সব নারী প্রকাশকরা যদি এক হয়ে ভালোভাবে কাজ করি তাহলে আমরা এ ধরনের চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে পারব।