দেশে বিকল্প চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত, প্রখ্যাত পরিচালক তানভীর মোকাম্মেলের জন্মদিন আজ ৮ মার্চ। একাধারে চিত্রনাট্যকার, লেখক ও চলচ্চিত্রের শিক্ষক হিসেবেও সব মহলে সমাদৃত এই গুণীজন। জন্মদিনে তাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে ভোরের আকাশ পরিবার।
বাংলাদেশে আধুনিক ধারার চলচ্চিত্রে তার অবদান বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ যখন ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে সেখানে আনন্দের পাশাপাশি বেদনাবিধূর নানা ঘটনাও ঘটে। এই ভূখণ্ড মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তনের অংশ হওয়ায় দাঙ্গা পরিপ্রেক্ষিতে দেশ ছাড়তে হয় অনেক হিন্দু পরিবারকে। ওপারেও একইভাবে বাস্তুচ্যুত হন অনেক মুসলমান পরিবার। নিজের ভিটেমাটি ছাড়তে না চাইলেই পরিস্থিতির শিকার হয়ে শুধুমাত্র ধর্মের কারণে তাদের অনেককেই যেতে হয় অন্যদেশে। এই বেদনা উপমহাদেশে অনেক বেশি ক্রিয়া করে পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে। সেই বেদনার সুরকে ধারণ করেছেন তানভীর মোকাম্মেল তার চলচ্চিত্রে।
মুক্তিযুদ্ধকে তিনি দেখেছেন ভিন্ন দৃষ্টিতে, সেলুলয়েডে বন্দি করেছেন বাঙালির সর্বাত্মক যুদ্ধের সময়কে- যুদ্ধদিনের গল্প তার পরিচালনায় জীবন্ত হয়েছে নতুন মাত্রায়। স্বদেশী আন্দোলন একটা সময় বাঙালিকে জুগিয়েছিল মুক্তির উদ্দীপনা। সেই আন্দোলনের নান্দনিক রূপ এঁকেছেন তানভীর মোকাম্মেল।
১৯৫৫ সালে খুলনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তিনি একজন রাজনীতিসচেতন চলচ্চিত্র নির্মাতা। ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই ছাত্রাবস্থাতেই বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পথিকৃত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও শিক্ষক আলমগীর কবিরের প্রতিষ্ঠিত ফিল্ম ইনস্টিটিউটে চলচ্চিত্র শিক্ষায় হাতেখড়ি ঘটে তার। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্রকেই ধ্যান-জ্ঞান হিসেবে বেছে নেন তিনি।
আশির দশক থেকে এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ২২টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। বিশেষ করে তিনি ১৯৪৭ এর দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাহিনীচিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। বিকল্পধারার এই চলচ্চিত্র নির্মাতা সবশেষ স্বদেশী আন্দোলন, দেশভাগ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একজন ত্যাগী বামপন্থী নেতার জীবনী নিয়ে নির্মাণ করেছেন সিনেমা ‘রূপসা নদীর বাঁকে’। তাঁর ছবিটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়।
তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে: স্মৃতি একাত্তর (১৯৯১), একটি গলির আত্মকাহিনী (১৯৯৩), নদীর নাম মধুমতী (১৯৯৫), অচিন পাখি (১৯৯৬), চিত্রা নদীর পারে (১৯৯৯), লালসালু (২০০১), লালন (২০০৪), কর্ণফুলীর কান্না (২০০৫), তাজউদ্দীন আহমদ: নিঃসঙ্গ সারথি (২০০৭), বস্ত্রবালিকারা (২০০৭), স্বপ্নভূমি (২০০৭), রাবেয়া (২০০৮), , দ্য জাপানিজ ওয়াইফ (২০১২), জীবনঢুলী (২০১৪), ১৯৭১ (২০১১) ও সীমান্তরেখা (২০১৯)।
বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রেসিডেন্ট ছিলেন তানভীর মোকাম্মেল। শিল্পকলায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।
চিত্রা নদীর পারে, লালসালু ও নদীর নাম মধুমতী চলচ্চিত্রের জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া তিনি দেশে বিদেশে অসংখ্য চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।