শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক ও বিনোদন কেন্দ্র নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে মূর্তজা ইনস্টিটিউট। এটি একটি সাংস্কৃতিক মিলনায়তন, যা এখন কাপড় ব্যবসায়ীর গুদামঘর। মিলনায়তনটি ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে মোটা অংকের টাকা ভাড়া পকেটস্থ করছেন এর পরিচালনা কমিটি। অথচ বিষয়টি নিয়ে কেউই অবগত নন জানিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।
এক সময় মূর্তজা ইনস্টিটিউট সৈয়দপুর শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল। বিশেষ করে রেলওয়ে বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিনোদনের প্রধান চত্বর ছিল এটি।
এই প্রতিষ্ঠানটিই ছিল তাদের মিলনমেলা। এখনো বিভিন্ন দিবস ও উৎসবে এখানেই আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠান। কিন্তু সাংস্কৃতিক এই অঙ্গনটিকে কাপড়ের গুদাম বানানোয় সাধারণ মানুষের পাশাপাশি তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে।
জানা গেছে, নাদিম আকতার নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী মূর্তজা ইনস্টিটিউটটি ভাড়া নিয়েছেন। তিনি মূল হল রুম ছাড়াও ক্লাব রুম, গেস্ট রুম, রিহার্সাল রুম, কস্টিউম রুমেও গুদাম করে কয়েক লাখ টাকার থান কাপড় রেখেছেন।
এলাকাবাসী জানান, কাপড় ব্যবসায়ী নাদিমের সঙ্গে সৈয়দপুর রেলওয়ে সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ কার্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রকৌশলী (আইওডব্লিউ) তৌহিদুল ইসলামের বেশ সখ্য রয়েছে। এ কারণে নাদিম মূর্তজা ইনস্টিটিউটের পাশেই গার্ডপাড়া এলাকায় একটি রেলওয়ে কোয়ার্টার অবৈধভাবে দখল করে বসবাস করছেন।
এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে রেলওয়ের আরো কয়েটি স্থাপনা ভাড়া নিয়ে গুদাম হিসেবে ব্যবহার করছেন। একইভাবে মূর্তজা ইনস্টিটিউটও ভাড়া নিয়েছেন। এক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি তৌহিদুল ইসলাম, রেলওয়ে কারখানার হিসাবরক্ষক রেজা হাসান ও কেয়ারটেকার আখতারের যোগসাজশ রয়েছে।
কাপড় ব্যবসায়ী নাদিম আকতারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ভাড়া নিয়ে কাপড় রাখছি। তাতে কার কী? প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি। এমন নয়তো যে, অবৈধভাবে দখল করে গুদাম বানিয়েছি। কিছু জানার থাকলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। কীভাবে ভাড়া দিয়েছেন তারাই ভালো জানেন।’
মিলনায়তনের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আখতার বলেন, ‘কমিটি ভাড়া দিয়েছে। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার দায়িত্ব দেখাশোনা করা, তা-ই করছি। গত তিন মাস হলো স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী নাদিম আকতার এখানে কাপড় রাখছেন।’
কোষাধ্যক্ষ রেজা হাসান বলেন, ‘সভাপতি-সেক্রেটারির অনুমতিক্রমে কমিটির তহবিল উন্নয়নের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিমাসে নিয়মিত ভাড়া আদায়ও করছি। এতে তো আয় বেড়েছে। যা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহসহ উন্নয়ন করা হবে।’
সাধারণ সম্পাদক ও রেলওয়ে সৈয়দপুর পিডব্লিউ অফিসের সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকার প্রয়োজনে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তাতে সমস্যা কী? ঘল রুম তো খালিই আছে। সেখানে সভা-সমাবেশ বা অনুষ্ঠান অনায়াসেই করা যায়। অন্য রুমগুলোও কোনো কাজে লাগে না। তাই ভাড়া দিয়েছি। এখানে নিয়ম-অনিয়মের কী আছে? বিষয়টি কমিটির সবাই জানে।’
সৈয়দপুর রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কমিটির সভাপতি আহসান উদ্দীন জানান, ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কোনোভাবেই এটি স্থায়ী ভাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই।
‘শুধু সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান করতে নির্দিষ্ট কয়েকদিনের জন্য ভাড়া দেওয়া যাবে।’
‘সভাপতি হলেও আমি নিয়মিত সেখানে যাই না। কিংবা কোনো বিষয়েই ওতোপ্রতভাবে খোঁজখবর রাখা হয় না। সবকিছু সাধারণ সম্পাদক তদারকি করেন। তিনিই বলতে পারবেন কীভাবে সেখানে কাপড় রাখা হচ্ছে’, বলেন আহসান উদ্দীন।
এ ব্যাপার সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মব্যবস্থাপক শেখ হাসানুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানেন না। এ নিয়ে ডিএসের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে সৈয়দপুর রেলওয়ে বিভাগের প্রধান রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমানকে অবগত করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এগুলোর বিষয়ে এখনো ভালোভাবে জানা হয়নি। জেনে নিয়ে সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’