গতকাল ‘দৈনিক ভোরের আকাশ’ পুঁজিবাজারের চলমান সংকট সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। মূলধনের ঘাটতি, মনঃগত কারণ এবং চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ- মোটা দাগে এগুলোই বিগত কয়েকদিনে পুঁজিবাজারের সংকট সৃষ্টির জন্য দায়ী। উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়া আরো কিছু ইস্যু বড় মাপের সংকট হিসেবে পুঁজিবাজারকে অস্থির করে তুলেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে শেয়ার ও ইউনিটের দরপতনের ধারা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিনিয়তই হ্রাস পাচ্ছে লেনদেন হওয়া সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর। আর এর জের ধরে লাগামহীনভাবে কমছে সূচক। বিনিয়োগকারীদের চোখের সামনে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার কমছে বাজার মূলধন। ৭ই মার্চ এক দিনেই সূচক কমেছে ১২ হাজার কোটি টাকা। আর গত আট কার্যদিবসে বাজার মূলধন কমেছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এমন পরিস্থিতিতে স্বভাবতই ভীত হয়ে পড়ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। লোকসান হলেও বাজার থেকে বেরিয়ে মুক্তি পেতে চাচ্ছেন তারা। আবার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত নতুন ক্রেতা। ফলে ক্রেতার আকালে ধরাশায়ী হচ্ছে পুঁজিবাজার।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন উপাদান পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা মতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিবরণী প্রতি ত্রৈমাস শেষ হওয়ার পর পরবর্তী মাসের সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংযুক্ত ছক মোতাবেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে দাখিল করতে হবে। বিষয়টিকে বাজার পতনের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া বাজার পতনের মার্জিন ঋণ সমন্বয় করার বিষয়টিও তুলে আনছেন অনেকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু সব বিষয়ে ছাপিয়ে গেছে বিনিয়োগকারীদের মনঃগত কারণ। তারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে শেয়ার বিক্রির কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধের প্রভাবে দেশের পুঁজিবাজারে সংকট সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু, একটি চক্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কম দরে শেয়ার কেনার জন্য তারা এটি করছে বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। দুঃখজনক সত্য, এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তারা ভয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে করে ওই চক্রটিও বেশি সুবিধা পাচ্ছে। যুদ্ধ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টার ঘটনা নিতান্তই অনাকাঙ্ক্ষিত।
আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা অল্পতেই ভেঙে পড়েন। তারা ভীত হয়ে শেয়ার ছেড়ে দেন। এতে করে পতন আরো ঘনীভূত হয়। ফলে বাজার আরো পড়ে যায়। বিনিয়োগকারীদের এ ধরনের মানসিকতা পরিহার করা দরকার। তা না হলে বাজার চিত্রে পরিবর্তন আসবে না। বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাজ হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজেদের বাজারের সঙ্গে মানানসই করে নেওয়া। কিন্তু আমাদের দেশে ঘটে এর উল্টোটা। ছোটখাটো ইস্যু পেলেই বিনিয়োগকারীরা তা না বুঝে ভীত কিংবা অস্থির হয়ে পড়েন। দ্রুত এর প্রভাব পড়ে পুঁজিবাজারে।
মূলত, আস্থা সংকটের কারণে বাজারে নানামুখী ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে না। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক ও নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে সত্তর ভাবতে হবে। তাছাড়া, পুঁজিবাজারে লেনদেনের ক্রমাবনতির জন্য দায়ী গুজবনির্ভরতা। কাজেই গুজবে কান না দিয়ে ভালো মৌল ভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগে মনোনিবেশ করতে হবে। সর্বোপরি, সঠিক কর্মপরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাজের সঠিক বণ্টন পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক চেহারায় ফেরাতে পারে।
“আস্থা সংকটের কারণে বাজারে নানামুখী ইতিবাচক সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়ছে না। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে নিয়ন্ত্রক ও নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি নিয়ে সত্তর ভাবতে হবে।”