logo
আপডেট : ৯ মার্চ, ২০২২ ১১:২৬
সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল
পলাশ প্রধান, গাজীপুর

সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল

এই সেতুর নিচে বানানো বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয় স্থানীয়দের

বিস্তীর্ণ কৃষিজমির বুক চিরে চলে গেছে ওধুর খাল। দীর্ঘ আট কিলোমিটার এ খালের ওপর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ভাঙাচোরা একটি সেতু। যদিও দীর্ঘ দুই যুগ ধরে সেতুটি ব্যবহার হচ্ছে না। সেতুটির নিচে বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছেন আশপাশের সাত গ্রামের হাজারো মানুষ। বলছি শিল্পসমৃদ্ধ গাজীপুর মহানগরীর ওধুর ও ছিকোলিয়া গ্রামে যাওয়ার পথের কথা।

মহানগরীর চাকচিক্য ছাপিয়ে চারপাশে বিস্তীর্ণ সবুজের মাঝখানে অবহেলিত দুটি গ্রাম ওধুর ও ছিকোলিয়া। গ্রাম দুটিতে প্রায় সাড়ে দুই হাজার পরিবারের বসবাস; যাদের অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী। কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা।

ওধুর খাল গ্রাম দুটিকে মহানগর থেকে আলাদা করে রেখেছে। খাল ডিঙিয়ে গত ৫০ বছরেও গ্রামের মানুষের দুয়ারে উন্নয়নের সুফল পৌঁছায়নি। গ্রাম দুটি ছাড়াও মহানগরীর বিন্দান, উলুখোলা, হারবাইদ, সমরসিং গ্রামের আরো প্রায় তিন হাজার মানুষ রাস্তাটি দিয়ে পুবাইল বাজারে যায়।

ওধুর-ছিকোলিয়া গ্রাম থেকে পুবাইলের দূরত্ব মাত্র এক কিলোমিটার। কিন্তু এ সড়কে ওধুর খালের ওপর একটি সেতুর অভাবে গ্রাম দুটি রয়েছে উন্নয়নবঞ্চিত।

২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর গ্রাম দুটিকে এর অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু নাগরিক সুবিধা কিছুই বাড়েনি। মহানগরীতে এ যেন এক অজপাড়াগাঁ। মাত্র একটি সেতুর অভাবে ওধুর ও ছিকোলিয়া গ্রামবাসীর দুঃখের অন্ত নেই।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওধুর খালের ওপর প্রায় ৩০ বছর আগে একটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। কিন্তু তখন সেতুর উচ্চতায় রাস্তা নির্মাণ না হওয়ায় সেতুটি অব্যবহৃত থেকে যায়। নিচু রাস্তা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায়। তখন মানুষ ছোট নৌকায় চড়ে যাতায়াত করে। আবার প্রতি বছর শুকনা মৌসুমে চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন গ্রামবাসী।

ওধুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নিপেন্দ্র চন্দ্র দাস। বুক ভরা আক্ষেপ নিয়ে তিনি দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন হওয়ার পর থেকে ট্যাক্স বেড়েছে, কিন্তু কোনো সুফল আমরা পাইনি। প্রতি বছরই সেতুর সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়, কিন্তু আশ্বাসে দীর্ঘশ্বাসই বেড়েছে। গ্রামের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে সেতুর অভাবে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘গর্ভবতী নারী ও স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চা ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়। বর্ষার সময় খুব অসুবিধা হয়। সেতুর নিচের সাঁকো দিয়ে স্থানীয় এমপি, মেয়রসহ অনেক নেতা আসা-যাওয়া করেছেন। কেউই রাস্তা করার উদ্যোগ নেননি। সদ্য বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমও বেশ কয়েকবার সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। তবুও আমরা রাস্তা পাইনি।’

সেতুটিতে সংযোগ সড়ক না থাকায় ওধুর গ্রামের মানুষকে গাড়ি নিয়ে ঘুরে যেতে হয় এশিয়া হাইওয়ে দিয়ে। আর ছিকোলিয়া গ্রামের মানুষকে যেতে হয় পুবাইল স্টেশন হয়ে। এতে ৩০-৪০ মিনিট বেশি সময় লাগে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমেন মিয়া বলেন, ‘একেবারে অহেতুকভাবে সরকারের টাকা অপচয় করে সেতুটি করা হয়েছিল। আমরা এখানে ইট বিছানো রাস্তার পরিবর্তে পাকা সড়ক করে দিয়েছি, কিন্তু নতুন করে সেতু এখনো হয়নি। এ বিষয়ে একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুর রহমান কিরণ বলেন, ‘খুব অল্প সময়ের মধ্যে গ্রাম দুটিকে সংযুক্ত করার জন্য সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিপূর্বে দুবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। অতিদ্রুত এটি ভেঙে নতুন করে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হবে।’