সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যম পুঁজিবাজারের গুজব নিয়ে সব সময় সরব থাকে। এজন্য ব্যক্তিগত আইডি (বেশির ভাগই ফেক) ছাড়াও নানা ধরনের গ্রুপ ব্যবহার করা হয়। কোন কোম্পানির শেয়ারদর বাড়বে, দর কত টাকা পর্যন্ত যাবে, কোন শেয়ারের দর কত কমবে, কারা কত লভ্যাংশ দেবে- এমন সব সংবেদনশীল তথ্য ছড়ানো থাকে এখানে। এসব গ্রুপ ছাড়া মৌখিকভাবেও ছড়ানো হয় গুজব। ব্রোকারেজ হাউসগুলো গুজব ছড়িয়ে ফায়দা হাসিল করেন সুযোগ সন্ধানীরা।
সম্প্রতি এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধু ইস্যু। গুজবকারীরা বলছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে আশঙ্কজনকহারে এর প্রভাব পড়বে। এসব তথ্য সত্যি মনে করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সহজেই আকৃষ্ট হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। যার প্রভাব পড়ছে বাজারে। এতে পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারী ঊভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) বলছে, যারা এমনটি করছে তাদের কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে গুজবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাতে বিশ্বের বড় বড় পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। বাংলাদেশেও আশঙ্কাজনকহারে এর প্রভাব পড়বে। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতিতে বিপর্যয় আসতে পারে বলে আশঙ্কার কথা বলা হচ্ছে। এ শঙ্কায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর তাতে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নতুন করে ধস নেমে এসেছে।
তবে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কোনো সম্পর্কে নেই। ফলে এ ইস্যুতে পুঁজিবাজারে দরপতন হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বর্তমানে দরপতনের পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কথা বলা হচ্ছে। এটা কোনো যৌক্তিক কারণ নয়। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে বিনিয়োগকারীদের ভয়েরও কিছু নেই।
তিনি বলেন, আমি পুঁজিবাজারে দরপতনের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। এখন যারা গুজবে ও আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছেন, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই প্যানিক হয়ে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এখন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করছেন। এ সময়ে যারা শেয়ার কিনছেন তারাই লাভবান হবেন।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন বলেন, যারা বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে আমরা তাদের খুঁজছি। ইতোমধ্যে এ জাতীয় ৩৫ জন গুজবকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কোনোভাবেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তবে কারো গুজবে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সেই গুজবের সত্যতা ও প্রভাব কতটুকু, তা যাচাই করার জন্য বিনিয়োগকারীদের পরামর্শ দেন তিনি।
এর আগে গত বছর গুজব ছড়ায় যারা তাদের শনাক্ত করার জন্য চার সদস্যের কমিটি গঠন করে বিএসইসি। এ কমিটিতে ছিলেন বিএসইসির পরিচালক রাজিব আহমেদ, সিডিবিএলের অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট বিভাগের প্রধান মো. মঈনুল হক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সিস্টেম অ্যান্ড মার্কেট অ্যাডমিন বিভাগের প্রধান আবু নুর মুহাম্মদ হাসানুল করিম ও সার্ভিল্যান্স বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মো. মাহফুজুর রহমান।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ডিএসই ইনভেস্টরস ক্লাব, উই ওয়ান্ট টু বি গেইনার, দ্য থার্ড আই, পুঁজিবাজার- ডিএসই ইনভেস্টরস ক্লাব, পাবলিক বিজনেস ক্লাব, শেয়ার মার্কেট সুপারস্টার গ্রুপ, দ্য রয়াল ক্লাব, শেয়ার বাজারে আড্ডা, রাকিব প্রফিট অ্যান্ড জয়, পুঁজিবাজার জিন্দাবাদ, স্টক মার্কেট টুডে, বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জোট, রকস্টার ক্লাব, রয়্যাল কিং মানি মেকারস, বাদশা জোন ইত্যাদি ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ গুজব ছড়িয়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন শেয়ারের বাজার মূল্যকে কৃত্রিমভাবে প্রভাবিত করছে বলে উঠে আসে।
এর প্রেক্ষিতে এই ধরনের বিভিন্ন গ্রুপ ও ব্যক্তিবর্গের আইডি বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়। তখন পুঁজিবাজার নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারী ৩১টি আইডি এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়।
প্রসঙ্গত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত মাত্র আট কর্মদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক কমেছে ৫০০ পয়েন্ট। কমেছে লেনদেন হওয়া প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটেরদর। এতে বাজার মূলধন কমে হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি।