logo
আপডেট : ৯ মার্চ, ২০২২ ১৯:৪৩
তামিম ইকবাল
‘গ্যারান্টি পারফরম্যান্স হয় না’
ক্রীড়া প্রতিবেদক

‘গ্যারান্টি পারফরম্যান্স হয় না’

দুয়ারে প্রস্তুত বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। কাল ও পরশু দুই ভাগে দক্ষিণ আফ্রিকা যাবে ক্রিকেটটাররা। প্রতিকূল কন্ডিশনে প্রোটিয়াদের সঙ্গে বাংলাদেশ খেলবে ওয়ানডে ও টেস্ট সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরু সফর।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের রেকর্ড খুব একটা ভালো না। ২১ বারের মোকাবিলায় জয় মাত্র চারটিতে। এর মধ্যে ঘরের মাঠে দুটি, ওভালে বিশ^কাপের ম্যাচে একটি। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে জয় পাওয়ার রেকর্ড আছে টাইগারদের। এরপর আর প্রোটিয়াদের মাটিতে ওয়ানডেতে আসেনি জয়। এবার কেমন হবে?

ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল এবার পাখির চোখ করে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে। বিশেষ করে ওয়ানডেতে জেতার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। যদিও তিনি বলেছেন, গ্যারান্টি দিয়ে পারফরম্যান্স হবে না। তবে জেতার জন্যই খেলে প্রত্যেক ক্রিকেটার। সবাই চাই জিততে।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো। আর তাই এই ফরম্যাটে জয়ের প্রত্যাশাটা অমূলক নয়। আর সেটা যেকোনো দলই হোক না কেন। তামিমও ভাবছেন তেমনটাই। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটা স্টেজে আছি (ওয়ানডে ক্রিকেট), জেতা ছাড়া অন্য কিছু বলাটা উচিত হবে না। অবশ্যই জয়ের লক্ষ্য নিয়েই যাব। সঙ্গে এটাও সত্যি যে, এটা কঠিন। ওখানে আমাদের রেকর্ড অতটা ভালো না। রেকর্ড জিনিসটাই এমন যে, যেকোনো মুহূর্তে চেঞ্জ হতে পারে। গ্রেট উদাহরণ ছিল, নিউজিল্যান্ড টেস্ট। যেখানে আমরা অনেকদিন যেকেনো ফরম্যাটেই ভালো খেলিনি। আমরা ওই জিনিসটা পরিবর্তন করতে পেরেছি। আমরা চেষ্টা করব, যেই রেকর্ডটা আমাদের দক্ষিণ অফ্রিকায় আছে ওই রেকর্ডটা পরিবর্তন করতে পারি। আমরা সবাই জানি, এটা চ্যালেঞ্জিং। ওদের কন্ডিশনে ওরা খুবই ভালো দল। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব। এটা না যে, আমি বলে যাব আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই, যেটা হয়তোবা আজ থেকে ১০ বছর আগে বলতাম। আমি অবশ্যই জিততে চাই। ওটা করার জন্য যা যা করার দরকার তা করব। তারপর যদি রেজাল্ট আমাদের হয়ে আসে, ভেরি গুড। যদি না আসে আমরা আবারো কঠিন পরিশ্রম করব।’

অধিনায়ক হিসেবে চাপ আছে। তবে চাপ থেকেও গর্ব অনুভব করেন তামিম। তিনি বলেন, ‘চাপ তৈরির থেকেও যে বিষয়টা আমি আমার নিজের পারফরম্যান্সে গর্ব খুঁজে পাই। নিজের ব্যাটিং নিয়ে গর্বিত। যখন আমি রান করি না তখন আমি খারাপ অনুভব করি। মানুষ কি বলে বলছে না বলছে সেটা নিয়ে আলোচনা হবেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেকটা সময় হতাশ হই। সঙ্গে সঙ্গে এতদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার কারণে এটাও শিখতে পেরেছি যে এক সিরিজ, দুই সিরিজ বা তিন সিরিজ আপনি ভালো খেলবে না। আবার আপনি টানা তিনটা সিরিজ ভালো খেলছেন। এই ক্রিকেট, জীবন, এর সঙ্গেই আপনার মানিয়ে নিতে হবে। আমি সব সময় একটা কথা বলি, কেউ যদি তিন, চার, পাঁচ ইনিংসে রান না করে তার ফর্ম চলে যায় না। আবার কেউ যদি ১০ ইনিংসের পর এক ইনিংসে ভালো খেলে সে ফর্মে এসে যায় না। এটার জন্য সময় দিতে হয়।’

দলের সব ক্রিকেটারই চায় পারফর্ম করতে। কেউ ইচ্ছা করে খারাপ করে না। তামিম বলেন, ‘সবাই চায় বাংলাদেশের প্রত্যেকেটা প্লেয়ার ভালো খেলুক। ভালো যদি না হয় তাহলে ওই খেলোয়াড়রা হতাশ হয়। সঙ্গে সঙ্গে আপনারাও হন। দর্শক যারা উনারাও হন। এখানে বিতর্কের কিছু নেই। আমি যেটা বললাম, যখন আমার সময় আসবে তখন আমি ঠিকই রান পাব। আমি যদি রান না পাই তাহলে কঠোর পরিশ্রম চালিয়ে যাব। আমি এর চেয়ে বেশি কিছু করতে চাই না। ১৪ বছরে শিখেছি, আগে খারাপ খেললে মানুষজনের সামনে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইতাম, ভালো খেললে এটা হবে ওটা হবে। আমার কাছে মনে হয় এটা নেতিবাচক ভাবনা ছিল। আমার কাছে মনে হয় যদি ৩ ম্যাচ ভালো খেলেনি এখন আমি দেখায় দেব তাহলে এটা আপনার জন্য অনেক চাপ তৈরি করবে নিজের প্রতি। এসব চিন্তা না করে আপনি যেটায় ভালো সেটায় চেষ্টা চালিয়ে যান। কোনো ভুল যদি করেন সেটা শুধরে নেন। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন দেখবেন আপনার সময়ে আপনি ঠিকই রান পাচ্ছেন।’

চলতি বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো জেতে টেস্ট, যা ছিল অবিস্মরণীয়। কিন্তু সেই সিরিজে বাংলাদেশ দলে ছিলেন না তামিম। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নিউজিল্যান্ডে ওই দলের সঙ্গে ছিলাম না দুর্ভাগ্যবশত। যারা ছিল আমি চাইব, তারা এসে কথা বলুক। ওই টিমের অনেকেই ওয়ানডে স্কোয়াডে আছে। তারা যদি ওই ম্যাচটাকে নিয়ে কথা বলে, তাদের ভাবনা, প্রক্রিয়াগুলো, ওই সময়ে কি চিন্তা করছিল ঘুরে দাঁড়াতে। অধিনায়ক হিসেবে আমারই সব বলতে হবে এমন কিছু না। প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আছে। প্রত্যেকেই দলের একজন নেতা। ওই টিমে যারা ছিল তাদের বলব সেসব নিয়ে যেন কথা বলে, তাদের মাইন্ডসেট এবং সবকিছু নিয়ে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভালো ফল পেতে সম্ভাব্য সব কিছু করব। আমি এতটুকু বলতে পারি, আমরা চেষ্টা করতে পারি কিন্তু পারফরম্যান্স গ্যারান্টি দিয়ে হবে না।’

তামিম এখনো শিখছেন। অধিনায়ক হিসেবে তো আরো। এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ১২-১৪টা ম্যাচ অধিনায়কত্ব করেছি। আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকটা ম্যাচ আমার জন্য শেখার জায়গা। প্রত্যেকটা ম্যাচে আমাকে ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেগুলো থেকে আমি শিখেছি। অধিনায়কত্ব এমন এক জিনিস, আনটিল, আনলেস অনেক দিন ধরে অধিনায়কত্ব করছেন, বয়সভিত্তিক থেকে অধিনায়কত্ব করছেন তাহলে আপনার অভিজ্ঞতা থাকবে। আমার জন্য প্রত্যেকটি ম্যাচ শেখার মঞ্চ। প্রত্যেকটা ম্যাচে নতুন পরিস্থিতি থাকে শেখার জন্য। আমি কেমন অধিনায়ক, কেমন দলের প্রতি অবদান রাখতে পারছি, সেটা আমি কখনোই নিজে রেট করতে পছন্দ করি না। অন্যরা আমাকে রেট করবে। এখন পর্যন্ত যেভাবে যাচ্ছে তাতে আমি খুশি। দুটি ম্যাচ যেটা আমার কাছে কষ্ট লাগে, একটা ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। একটা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আমরা ডমিনেট করছিলাম সিরিজটা কিন্তু স্ট্রংলি ফিনিশ করতে পারিনি। ওদিক থেকে কিছুটা হতাশার। তবে জীবন এভাবেই চলবে। আপনি চ্যালেঞ্জ করবেন, আপনাকেও সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।’