logo
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২২ ১৪:১৫
পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিতের দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক

পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিতের দাবি

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের (বিএনপিএস) সংবাদ সম্মেলন। ছবি- ভোরের আকাশ

উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) নামের একটি সংগঠন।

বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিএস-এর উপ-পরিচালক শাহনাজ সুমী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহ-সভানেত্রী মাখদুমা নার্গিস রত্না, স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক রাক্তন কর্মকার, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর অর্পিতা দাস, সমাপিকা হালদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন। তারা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে উপস্থিত বক্তার বক্তব্য রাখেন।

রোকেয়া কবীর বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল অবদান এ দেশের নারী সমাজের। অথচ দুঃখজনকভাবেও ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক গৃহীত বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের বলে উত্তরাধিকার পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাওয়া থেকে বাংলাদেশের নারীসমাজকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিএসসহ বিভিন্ন নারী সংগঠন সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলাদেশের সুধীসমাজের পক্ষে উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের দাবিতে আইন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে।

শাহনাজ সুমী বলেন, দেশের সব নাগরিকের অধিকার রক্ষা এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাংলাদেশের সব আইনই প্রণীত হয়েছে সংবিধানের আলোকে ইউরোপীয় সিভিল আইনের আদলে। শুধু নারী অধিকার খর্বকারী এই পারিবারিক আইনটিই প্রণীত হয়েছে ধর্মীয় বিধানকে অবলম্বন করে। একটি স্বাধীন দেশে এমন দ্বৈত ব্যবস্থা চলতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে নার্গিস রত্না বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ২৭ এবং ২৮ অনুচ্ছেদে সমতার কথা বলা আছে। আমাদের দেশে নারীর মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য অনেক আইন আছে, কিন্তু উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে আধান্য দেওয়া হয়েছে, যা সংবিধানের সমঅধিকারকে ক্ষুণ্ন করে।

আমাদের সিভিল আইন, ফৌজদারি আইন প্রভৃতি ধর্ম দ্বারা পরিচালিত নয়। কিন্তু পরিবারিক আইনসমূহ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এজন্য নারী আন্দোলনের দীর্ঘ দিনের দাবি- পারিবারিক বৈষম্যমূলক আইনগুলোর আমূল সংস্কার করে অভিন্ন পরিবারিক আইন।

রঞ্জন কর্মকার বলেন, উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকা নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং একইসাথে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। উত্তরাধিকারে সমান অধিকার না থাকায় শিশু বয়স থেকেই পরিবারে মেয়েশিশুকে লালনপালন করা হয় মূলত একটা উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিবারের এই মানসিকতা যেমন বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি করে, তেমনি জীবনভর নারীদের পরজীবী হিসেবে গণ্য হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়।

অর্পিতা দাস বলেন, নারীরা প্রতিনিয়ত যে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার মূলে রয়েছে বৈষম্যমূলক আইন। এর মধ্যে রয়েছে প্রচলিত বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক তানজীম উদ্দিন খান বলেন, পরিবারের দ্বিতীয় শ্রেণীর সদস্য হিসেবে গণ্য হওয়ায় নারীদের প্রতি নানা ধরনের বৈষম্য-নির্যাতন হতে দেখে পরিবারে বসবাসরত অপরাপর সদস্যদের মধ্যেও পুরুষ আধিপত্য ও অম্লতান্ত্রিক মনমানসিকতার চর্চা ও আচরণ বিকাশ লাভ করে। পরবর্তী সময়ে যে আচরণ বৃহত্তর সমাজে পুনরুৎপাদিত হয়। এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে উত্তরাধিকারে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়া অপরিহার্য।