ছুটির দিনের অপেক্ষায় থাকেন ছোট এবং মধ্যমমানের স্টল মালিকরা। পুরো সপ্তাহ স্টলগুলোর বেচাকেনা আশানুরূপ হয় না। শুক্র ও শনিবারে মেলায় প্রচুর লোক আসার কারণে কেবল ওই দিনই সেসব স্টলে ভিড় হয়। ছোট প্রকাশনীর স্টলের মালিক ও বিক্রয়কর্মীদের দাবি বড় প্রকাশনী ও প্যাভিলিয়নগুলো এক জায়গায় হওয়ার কারণে মেলার দর্শনার্থীদের ভিড় এককেন্দ্রিক হয়ে গেছে। তাই ছোট প্রকাশনীগুলোতে পাঠক সমাগম হচ্ছে না। এ কারণে বেচাবিক্রি কমছে বলে দাবি করছেন বিক্রয় প্রতিনিধি এবং প্রকাশকরা।
প্যাভিলিয়নগুলো একত্রে হওয়ার কারণে অনেক আগেই প্রকাশকরা এ বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। যদিও বাংলা একাডেমি এ বছর প্যাভিলিয়নগুলোকে মেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্থাপন করেছেন। তবে পরবর্তী সময়ে মেলা হলে যেন বড় এবং নামিদামি প্যাভিলিয়নগুলো একসঙ্গে না দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেলার বিভিন্ন প্রান্তে নেওয়ার দাবি করছেন স্টল মালিকরা। এর ফলে দর্শক সমাগমের সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি ছোট স্টল এবং প্রকাশনীগুলোর বেচাবিক্রির জন্য শুক্র ও শনিবারের দিকে চেয়ে থাকতে হবে না।
প্রকাশকরা বলছেন মেলার প্রথম ১৩ দিনে পাঠক সমাগম ছিল অনেক বেশি। কিন্তু সে তুলনায় বেচাবিক্রি এতটা ছিল না। কিন্তু মেলার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীর ভিড় কমতে শুরু করলেও বেচাবিক্রি কিছুটা হলেও বেড়েছে। এখন যেসব পাঠক বই কিনতে আসছেন তারা আগে থেকেই পছন্দের বইগুলোর তালিকা নিয়ে মেলায় আসছেন। ফলে এখন মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী কমেছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা।
এদিকে গতকালও মেলায় এসেছিলেন নবীন-প্রবীণ লেখকেরা। কেউ কেউ সময় কাটিয়েছেন নিজের বই থাকা স্টলে। ভাব বিনিময় করেছেন পাঠকদের সঙ্গে। ছিলেন ঢাকার বাইরের প্রকাশকেরা।
প্রকাশনী সংস্থা রংপুর জেলা থেকে আগত ‘আইডিয়া’ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি বলেন, ঢাকার বাইরের প্রকাশনী হিসেবে আমরা কিছু ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। আমাদের প্রকাশনীতে পাঠক সবচেয়ে বেশি পাচ্ছি রংপুরের। তবে ঢাকার পাঠক আমাদের এখানে খুবই কম। তবে ঢাকার বাইরের প্রকাশনী হিসেবে প্রতিবার আমাদের একটা ব্যাকওয়ার্ড যায়গায় স্টল দেওয়া হয়। এ কারণে আমরা খুব বেশি পাঠক পাচ্ছি না। ইঞ্জিনিয়ারিং গেটের পাশে হওয়ায় এ দিক দিয়ে লোক একদমই ঢোকে না। এই দিকের প্রচারণাটা খুবই কম। শুধু লেখক এবং প্রকাশকদের পরিচিত বন্ধুবান্ধব এবং রংপুরের স্থানীয়দের ছাড়া আর তেমন কোনো নতুন পাঠক পাচ্ছি না। এ বছর আমরা এখন পর্যন্ত ১৬টি নতুন বই মেলায় এনেছি।
ওই প্রকাশনীর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বই হচ্ছে সিনথিয়া খানের লেখা বই ‘অপরাজিতার গল্প’ এবং মাসুদ মোরশেদের ‘যে জন প্রিয়জন’ বইটি খুব ভালো চলছে।
আবির আর্মান নামের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র গত বছর মেলায় আসতে পারেনি করোনার কারণে। তবে বইমেলার শেষ মুহূর্তে তার পছন্দের বইয়ের তালিকায় নিয়ে চলে এসেছে বইমেলায়। তার পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে জাফর ইকবালের বই ‘শান্তা পরিবার’ ‘বকুল আপু’। হুমায়ূন আহমেদের ‘মিছির আলী’ এবং ফয়জুল আলম পাপ্পু সম্পাদিত ‘কিশোর আবৃত্তির কবিতাসমগ্র’ বইগুলো। মেলায় এসব বই খুঁজে পেয়ে সে অনেক আনন্দিত। তবে তার কবিতার বই অনেক পছন্দ বলে জানিয়েছে সে।
বুধবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৩তম দিন। মেলা চলে বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্তÍ। এ দিন নতুন বই এসেছে ৫২টি। নিয়মিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চ অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি শীর্ষক আলাচনা অনুষ্ঠান।