logo
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২২ ১৬:০৫
‘চতুর’ প্রতারক হামদর্দের সাবেক কর্মকর্তা ইকবাল
এমদাদুল হক খান

‘চতুর’ প্রতারক হামদর্দের সাবেক কর্মকর্তা ইকবাল

প্রতীকী ছবি

সার্টিফিকেট জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ হামদর্দের সাবেক কর্মকর্তা ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। লক্ষ্মীপুরে তার রয়েছে একটি শক্তিশালী প্রতারক সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে বিশেষ টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। ইকবাল বাহিনীর নির্যাতনে পঙ্গুও হয়েছেন কেউ কেউ। সম্প্রতি আবারো সক্রিয় হয়ে ওঠেছেন চতুর প্রতারক ইকবাল। বিস্তৃত করছেন তার প্রতারণার জাল। গড়ে তুলেছেন সার্টিফিকেট জালিয়াতির ভয়াবহ চক্র। তার এই প্রতারণার সূত্র ধরে অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে বেড়িয়ে এসেছে সাপ।

জানা গেছে, ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী নিজে রয়েল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা থেকে ০৪০১২০৬০৩১ আইডিধারী হিসেবে ২০০৫ সালে এমবিএ উত্তীর্ণ বলে দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তার এমবিএ সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট উভয়ই জাল। বিশ্ববিদ্যালয়টির সিনিয়র সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ.কে.এম ফিরোজ উদ্দিন সরকার স্বাক্ষরিত জাল সনদের প্রমাণ সম্বলিত একটি চিঠিও সাংবাদিকদের হাতে এসেছে।

এ. কে. এম ফিরোজ উদ্দিন সরকার জানান, ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীর এমবিএ সনদ ও নম্বরপত্র দুটিই ভুয়া ও জাল। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতারক ইকবালের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা। এভাবে সার্টিফিকেট জালিয়াতির সিন্ডিকেট, চাকরি দেবার নামে প্রতারণা এবং ওয়ান ইলেভেনে আওয়ামীলীগের নেতাদের নির্যাতন করে প্রাপ্ত চাঁদার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন ইকবাল। ঢাকার উত্তর ভাষানটেকের ১৫০/৫ সুনিলপাড়ায় ৬ তলা বাড়ি, একই এলাকার ১৬১/এ, এম এ হালিম রোডের তৃতীয় তলায় একটি এবং ১৬৭/৪, মাটিকাটা মেইনরোডে কিনেছেন আরেকটি ফ্ল্যাট।

ট্রপিক্যাল ক্যান্টভিউয়ে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন প্রতারক ইকবাল। সাভারের জিরাবো কুটুরিয়ায় কিনেছেন ১০ কাঠার বাড়ি করার জায়গা, পূর্বাচলে রয়েছে তার প্লট। কানাডায় কোটি কোটি টাকা পাচার করে নিজের মেয়ে এবং মেয়ের জামাইয়ের নামে কিনেছেন বিলাসবহুল বাড়ি। এছাড়াও ইকবাল প্রতারণার টাকায় মালয়েশিয়ায় করেছেন সেকেন্ড হোম। এই প্রতারক দুর্নীতির টাকায় কিনেছেন ৩টি গাড়ি, একটি হ্যারিয়ার মডেলের জিপ এবং স্কয়ার নোয়া ও প্রিমো মডেলের দুটি প্রাইভেটকার।

ইকবাল মাহমুদ চৌধুরী সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে হামদর্দ বাংলাদেশেও চাকরি জুটিয়েছিলেন। ২০২১ এর ডিসেম্বরে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হলে নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন এই প্রতারক। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অব্যাহতভাবে ইকবাল চালাতে থাকেন মিথ্যা ও বানোয়াট অপপ্রচার। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে রমনা মডেল থানায় জিডি করা হয়েছে। যার নম্বর ১৬৯৫।

এদিকে লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের কংসনারায়ণ গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল এলাকার অসংখ্য মানুষকে চাকরি দেবার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

একই ইউনিয়নের মরহুম খলিলুর রহমান পাটোয়ারির সন্তান বৃদ্ধ ওমর ফারুক পাটোয়ারি জানান, ইকবাল একজন চিহ্নিত প্রতারক। লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষের সর্বস্ব লুট করেছে সে। প্রতারণার কাজে সহযোগিতা করতে প্রতারক ইকবাল বৃদ্ধ ওমর ফারুক পাটোয়ারিকে বিশ হাজার টাকাও ঘুষ দেয়। এসব তথ্য অকপটেই স্বীকার করেছেন ষাটোর্ধŸ ওমর ফারুক।

এছাড়া কয়েকজন নারী ভুক্তভোগী ইকবালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। এছাড়া লক্ষ্মীপুরের জনকল্যাণ আলিম মাদরাসার ভুবানন্দ রায়, একই জেলার দত্তপাড়া থানার বেগম আলেয়া প্রতারক ইকবালের বিরুদ্ধে চাকরি দেবার নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে প্রতারক ইকবাল মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে ইকবালের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে আগ্রহী নয় বলে জানান।