logo
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২২ ১৮:১৮
ইউক্রেন ফেরত নাবিক
‘ভেবেছিলাম মৃত্যু হবে; নতুন জীবন পেয়েছি’
কামরুজ্জামান মিন্টু, ময়মনসিংহ ব্যুরো

‘ভেবেছিলাম মৃত্যু হবে; নতুন জীবন পেয়েছি’

রুকনুজ্জামান রাজিব (ফাইল ছবি)

ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়া জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ জন নাবিক কয়েক দিনের টানা উৎকণ্ঠা ও অনিশ্চয়তার পর অবশেষে বাড়ি ফিরেছেন। নিরাপদে বাড়ি ফিরেছেন থার্ড অফিসার মো. রুকনুজ্জামান রাজিবও।

তিনি ময়মনসিংহ সদরের কাঁচিঝুলির জোবেদ আলী রোডের মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলির ছেলে। গত বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ২৬ বছর বয়সী এই নাবিক বাড়িতে এসে পৌঁছান। এতে খুশি পরিবার ও স্বজনরা।

জাহাজে সেদিনের রকেট হামলার বিষয়ে রুকনুজ্জামান রাজিব কথা বলেন দৈনিক ভোরের আকাশের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘জাহাজে হামলা হবে কল্পনাও করিনি। গত ২ মার্চ ইউক্রেনের স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে জাহাজে মিসাইল হামলা হয়। সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়। সবাই মিলে দ্রুত আগুন নেভানোর পর থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুরের মরদেহ খুঁজে পাই।’

রুকনুজ্জামান রাজিব আরো বলেন, ‘আমরা তাৎক্ষণিক কোম্পানিকে বিষয়টি জানাই। পরদিন সকালে বাংলাদেশ সরকার ও শিপিং করপোরেশনের আন্তরিক প্রচেষ্টায় একটা বাঙ্কারে ঢুকতে পেরেছিলাম।’

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আঁচ পেয়ে ইউক্রেন থেকে আগেই জাহাজ ফেরানো সম্ভব ছিল কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শুরুর পর বন্দরের ১৯টি চ্যানেল বন্ধ ছিল। কোনো চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে ফেরার সুযোগ ছিল না। এজন্য আতঙ্কিত ছিলাম আমরা। ভেবেছিলাম, হয়ত এখানেই মৃত্যু হবে। কিন্তু নতুন জীবন পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের চেষ্টায় যুদ্ধের মধ্যেও জাহাজ থেকে নামিয়ে আমাদেরকে নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। শিপিং করপোরেশন, প্রধানমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

‘তবে বাড়িতে পরিবারের কাছে ফিরে এখন স্বস্তি লাগলেও দুঃখ থেকেই যাচ্ছে। আমরা এক সহকর্মীকে হারিয়ে ফেলেছি। তাকে আমাদের সঙ্গে জীবিত ফিরিয়ে আনতে পারিনি’, বলেন রুকনুজ্জামান।

রুকনুজ্জামান রাজিবের মা কোহিনূর বেগম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘বাড়ির সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলাম। সবসময় কান্না করতাম। নামাজ পড়ে আমার ছেলেসহ আটকে পড়া সব নাবিকদের জন্য মন থেকে দোয়া করেছি। হয়ত মহান আল্লাহ দোয়া কবুল করেছেন দেখেই ওরা ফিরতে পেরেছে। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’

রুকনুজ্জামানের বাবা ওয়াজেদ আলি বলেন, ‘ছেলের মরদেহ দেখতে পারবোনা এমন আশংকাও ছিল সবসময়। কিন্তু এখন জীবিত অবস্থায় ছেলেকে ফেরত পেয়েছি। আমি অনেক আনন্দিত, মহাখুশি।’

রোমানিয়ার বুখারেস্ট থেকে টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে বুধবার দুপুর ১২টা ১ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ২৮ নাবিক ও ক্রু।