logo
আপডেট : ১০ মার্চ, ২০২২ ১৯:১৩
ইউক্রেন ফেরত নাবিক সৈয়দ আসিফুল ইসলাম
নিহত হাদিসুর নামাজ পড়ে ৬ তলার ব্রিজে যায়
জুয়েল রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

নিহত হাদিসুর নামাজ পড়ে ৬ তলার ব্রিজে যায়

সৈয়দ আসিফুল ইসলাম

সহকর্মীকে হারানোর দুঃসহ শোক নিয়ে দেশে ফিরেছেন ইক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে থাকা বাংলাদেশি জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধির’ ২৮ নাবিক।
গত বুধবার (০৯ মার্চ) দেশে ফিরেন তারা। তাদের সঙ্গে ফিরেছেন জাহাজটির সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ আসিফুল ইসলাম। তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের মুন্সেফপাড়ায়।

সম্প্রতি তিনি চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে পদোন্নতি পান। বাংলার সমৃদ্ধির চিফ ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা ছিল তার। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যকার চলমান যুদ্ধে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজে হামলা চালানো হয়। এতে জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান মারা যান।

রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ নূরুল ইসলামের দুই ছেলে-মেয়ের মধ্যে আসিফুল বড়। বুধবার রাতে নিজ বাড়িতে ফিরেন তিনি। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দরে আটকে পড়ার পর থেকেই ছেলেকে জীবিত ফেরত পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন বাবা নুরুল ইসলাম ও মা পারভীন আক্তার। অবশেষে ছেলেকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তারা।

নিজ বাড়িতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ইউক্রেনের বন্দরে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় কাটনো দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন আসিফুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এক সহকর্মীকে হারিয়েছি। আল্লাহ্ তাকে জান্নাত নসিব করুক। সেদিন (ঘটনার দিন) তুমুল হামলা হয় ইউক্রেনে। আমরা ভাবতে পারিনি আমাদের জাহাজে হামলা হবে। থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিস আসর নামাজ পড়ে জাহাজের ছয় তলার উপরে ব্রিজে যায় মোবাইলে কথা বলার জন্যে।

‘সেখানে নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যেত। এর মধ্যে তার থেকে ২/৩ ফুট দূরে রকেটটি পড়ে। প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি হাদিস মারা গেছে। রকেট হামলায় জাহাজে লাগা আগুন নেভানোর দুই ঘণ্টা পর বুঝতে পারি হাদিস মারা গেছে। আমাদের জাহাজে ইউক্রেন নাকি রাশিয়া হামলা করেছে- সেটি আমরা বুঝতে পারছি না।’

‘তবে যতক্ষণ জাহাজে আটকা ছিলাম- ভয়ে ছিলাম। আমাদের দেড় থেকে দুইমাসের খাবার, পানি ও তেল মজুদ ছিল। কোন খাদ্য সংকট ছিল না’, বলেন তিনি।

আসিফুল আরো বলেন, ‘রকেট হামলা হয়েছিল জাহাজের ছয় তলার ছাদে। আমাদের ফোকাস ছিল আগুনের দিকে। সেখানে ছিল প্রচণ্ড শীত। যদি জাহাজ থেকে নেমে যেতে হয়, তখনো সেইফ এক্সিটের কোনো প্ল্যান হয়নি। যদি জাহাজ থেকে নামি তাহলে শীতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। যদি কেউ আমাদেরকে উদ্ধার করতে নাও আসে; জাহাজে কয়েকদিন অন্তত থাকতে পারবো, তাই আমাদের ফোকাস ছিল আগুনের দিকে। আগুন নেভানোর পর আমরা হাদিসের মরদেহ উদ্ধার করে ফ্রিজিং কক্ষে রাখি। এর একদিন পরই আমাদের উদ্ধার করা হয়।’

একমাত্র ছেলেকে ফিরে পেয়ে আসিফুলের বাবা সৈয়দ নুরুল ইসলাম নাবিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।