রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্ল্যাটফর্মস এর খসড়ায় গুরুতর ক্রটি আছে বলে দাবি করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, আলোচ্য খসড়ার কয়েকটি ধারা সংবিধান পরিপন্থী। পাশাপাশি আইনের ইচ্ছামতো ব্যাখ্যা ও অপব্যবহারের সুযোগ আছে আরো কয়েকটি ধারাতে, যা জনগণের কণ্ঠরোধে ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অযৌক্তিক নীতি কাঠামোর আওতায় এনে জনগণের ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তা লঙ্ঘনে বাধ্য করার পথ সুগম করা হয়েছে বলে মনে করছে টিআইবি।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানকে উদ্ধৃত করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, আলোচ্য খসড়াটিতে এতো বেশি নিবর্তনমূলক, পরস্পরবিরোধী, বাস্তবায়ন অযোগ্য এবং সর্বোপরি বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার মতো বিধানের সন্নিবেশ করা হয়েছে যে, এর সংশোধন করা অবান্তর।
তাই বর্তমান খসড়াটি বাতিল করে, এই খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় নতুন একটি খসড়া প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রস্তাবিত খসড়ায় বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞান ও প্রজ্ঞার গুরুতর অভাব দেখা গেছে এমন মন্তব্য করে ড. জামান বলছেন, ‘রেগুলেশনের কার্যকারিতা বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে সীমিত রাখা হয়নি। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, সার্ভিস ও অ্যাপ্লিকেশনের কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি। খসড়া প্রণয়নকারীরা অনুধাবন করতে পারেননি যে তাঁরা বিশেষায়িত পরিষেবাগুলোর ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে ত্রুটিপূর্ণ সংজ্ঞা দিয়েছেন। এতে মনে হচ্ছে ব্যবহারগত, প্রযুক্তিগত ও পরিচালনাগতভাবে পুরোপুরি আলাদা হওয়ার পরও একসঙ্গে একাধিক পরিষেবাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সব কিছুকে এক মাপকাঠিতে মাপার চেষ্টা করা হয়েছে।’
ড. জামান বলছেন, ‘প্রচলিত টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচার নীতিমালা কোনভাবেই প্রাসঙ্গিক না হলেও একেই ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা, ভ্যাট ও ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর নেওয়া এবং বিটিআরসি’র কাছে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়গুলো যে এই বিশেষায়িত পরিসেবাগুলোর জন্য প্রয়োজ্য নয় সেটা খসড়ায় বিবেচনা করা হয়নি। পাশাপাশি বিটিআরসিকে রেজিস্ট্রেশন বাতিলের যে ঢালাও এখতিয়ার দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে গুরুতর পরিচালন ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’
টিআইবি মনে করে, এই খসড়ার বেশ কয়েকটি ধারা বাকস্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেল্ফ সেন্সরশিপের চর্চা করতে বাধ্য হবে। বার্তার ট্রেসেবিলিটি বা উৎস শনাক্তকরণের শর্ত প্রতিপালন করতে হলে এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের শর্ত ভাঙতে হবে, যা ব্যক্তিগত যোগাযোগের গোপনীয়তার সংবিধানস্বীকৃত অধিকার খর্ব করে। এতে করে সাংবাদিক, ভিন্নমতাবলম্বী ও অধিকারকর্মীরা বাড়তি ঝুঁকিতে পড়বেন। এছাড়া ইন্টারমিডিয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনগত সুরক্ষা না থাকা এবং তাদের কর্মীদের জরিমানার বিধানও সেল্ফ সেন্সরশিপকে উৎসাহিত করবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই রেগুলেশনেও ‘অপমানসূচক’, ‘ক্ষতিকর’, ‘আপত্তিকর’ অথবা ‘সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গ’-এসব শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়েছে, যার কোন সর্বজনগ্রাহ্য সংজ্ঞা আমাদের সামনে নেই। এমন পরিস্থিতিতে এসব কারণে কন্টেন্ট ব্লক করার যে বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে, তা মারাত্মক অপপ্রয়োগের ঝুঁকি তৈরি করবে। আর কন্টেন্ট ব্লক করার জন্য যে সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা একেবারেই অপ্রতুল; তাতে হয়রানি আরো বাড়বে।’
আলোচ্য খসড়াটির ওপর টিআইবির এসব পর্যবেক্ষণ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে বিটিআরসিতে পাঠানো হয়েছে এবং সংস্থাটি মনে করে, নানাবিধ সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমলে নিয়ে খসড়াটি বাতিল করে দেওয়াই যুক্তিযুক্ত।
ড. জামান বলেন, ‘বিশেষায়িত এসব পরিষেবার বিপুল ব্যবহার, জনগণের মৌলিক মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এবং বিদেশি বিনিয়োগের মতো বিষয়গুলো এখানে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই এ সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের দায়িত্ব জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে খসড়া প্রণয়নে বিশেষায়িত এসব পরিষেবার বিষয়ে উপযুক্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’