logo
আপডেট : ১১ মার্চ, ২০২২ ০৯:০৮
পাইকারদের সিন্ডিকেট
দাম পাচ্ছেন না আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়ার চাষিরা
মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ

দাম পাচ্ছেন না আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়ার চাষিরা

শ্রমিকরা জমি থেকে কুমড়া উঠানোর পর রাস্তার পাশে মজুত করছেন ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়ার খ্যাতি রয়েছে দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। জাতীয় কৃষি মেলা তথা আন্তর্জাতিক মেলায় প্রদর্শনী ও বিক্রির তালিকায় রয়েছে এখানকার কুমড়া। এ বছরও বিলের গাদিঘাট, শ্রীধরপুর, আলমপুর, বাড়ৌয়খালীসহ ১৪৫ হেক্টর জমিতে কুমড়ার চাষ করা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। কিন্তু পাইকারদের সিন্ডিকেটের কারণে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এখানকার কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিলের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আবাদ হয়েছে মিষ্টি কুমড়ার। একেকটি কুমড়ার ওজন পাঁচ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত। এগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, আকৃতিতেও বিশাল।

শ্রমিকরা জমি থেকে মাথায় ও নৌকায় করে গাদিঘাটসহ বিলের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে কুমড়া মজুত করছেন। সেখান থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় পাইকাররা গাড়িতে ঢাকায় নিয়ে যান এ মিষ্টি কুমড়া।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৪ শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১২টি মিষ্টি কুমড়ার চারা রোপণ করা হয়। প্রতিটি চারায় ২০ থেকে ৬০টি পর্যন্ত কুমড়া হয়ে থাকে।

আশ্বিন মাসে এ কুমড়ার চাষাবাদ শুরু হয়। রোপণের তিন মাস পরই ফসল তোলা যায়। শীতের শেষের দিকে ফসল বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়।

গাদিঘাট গ্রামের চাষি রফিকুল ইসলাম জানান, এবার তিন কানি জমিতে কুমড়া চাষ করেছেন তিনি। এ বছর ফলনও ভালো হয়েছে। ঢাকা থেকে অনেক পাইকার আসে এখানে। কিন্তু তারা সিন্ডিকেট করে আসে। বাজারে যে ধরনের দাম থাকে সে হিসেবে চাষিরা দাম পায় না।

আড়িয়াল বিলের মিষ্টি কুমড়ার স্বাদই আলাদা কিন্তু তারপরও দাম অনেক কম পাচ্ছেন তারা।

গাদিঘাট গ্রামের কৃষক ফারুক বেপারী বলেন, আমি ১০ বিঘা জমিতে কুমড়ার চাষ করছি। এবার দাম ভালো পাইনি কারণ পাইকাররা সিন্ডিকেট করে আসে। জমি থেকে কুমড়া ওঠানোর পর যদি কোনো পাইকার এসে দাম করে এটা ওই পাইকার ছাড়া অন্য কারও কাছে বিক্রি করতে পারি না।

তিনি আরো বলেন, ‘একজন দাম করে গেলে আর কোনো পাইকার আসে না। তারা সবাই সিন্ডিকেট করে আসে। ঢাকায় নিয়ে গেলও একই অবস্থা।’

‘ঢাকার বাজারে আমাদের কুমড়ার দাম অনেক বেশি। কিন্তু আমরা দাম পাই না। কষ্ট করি আমরা, লাভ করে পাইকাররা’, বলেন ফারুক বেপারী।

এ বিষয়ে পাইকার জামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা চাষিদের কাছ থেকে লট বা মণ হিসবে মিষ্টি কুমড়া কিনি। ৬০ মণের কুমড়ার গাড়ি বিক্রি হয় ২৫ হাজার টাকা আর ৭০ থেকে ৮০ মণের গাড়ি বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায়।

‘আমরা ঢাকার কারওয়ান বাজারে নিয়ে ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে কুমড়া বিক্রি করি। এটা আবার কয়েক হাত ঘুরে দাম বেড়ে যায়। আমরা চাষিদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ টাকা কেজি হিসেবে করে লট কিনি।’

জামাল হোসেন আরো বলেন, বর্তমানে বাজার ভালো না। চাষিরা নিজেরাও ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করে। এখন কুমড়া নিতে ভাড়া বেশি পড়ে যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শান্তনা রানী বলেন, ‘এ বছর আড়িয়াল বিলের শ্রীনগর অংশে ১৪৫ হক্টর জমিতে কুমড়ার চাষ হয়েছে। আগাম কুমড়া চাষ করায় এ বছর চাষিরা লাভবান হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘চারা রোপণের ফসল উৎপাদনে সময় লাগে তিন মাসের মতো। বিলের কুমড়ার জাত একেবারেই স্থানীয়, স্বতন্ত্র। অন্য কোনো এলাকার জমিতে কুমড়ার বীজ রোপণ করলেও এমন স্বাদ ও বিশাল আকৃতির হয় না।’