logo
আপডেট : ১১ মার্চ, ২০২২ ১১:৩১
যশোরের লালদিঘি
শ্রীবৃদ্ধির বদলে শ্রীহীন
এইচ আর তুহিন, যশোর ব্যুরো

শ্রীবৃদ্ধির বদলে শ্রীহীন

যশোরের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘি যেন ময়লার ভাগাড়

যশোর শহরের ‘মূল কেন্দ্রে’ লালদিঘির শ্রীবৃদ্ধি করতে ব্যয় করা হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। দিঘির সংস্কার, পাড় বাঁধা, ওয়াকিংওয়ে, সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টসহ আলী রেজা রাজু মঞ্চ নির্মাণে এ অর্থ ব্যয় করা হয়। অথচ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সংস্কার ও দৃষ্টিনন্দনের সব টাকা জলে গেছে।

দুই বছর পার না হতেই ময়লা-আবর্জনায় নষ্ট হয়ে গেছে পানি। পাড় বাঁধতে বসানো এক পাশের ব্লক ধসে পড়েছে দিঘির ভেতর। হাঁটার পথেও ধরেছে ভাঙন। তিন পাড়ের হাঁটার রাস্তা দোকানপাটের দখলে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকে প্রাইভেটকার-মাইক্রো ও মোটরসাইকেল পার্কিং। ফলে দৃষ্টিনন্দনের বদলে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রের প্রাচীন জলাশয় লালদিঘি এখন শ্রীহীন অবস্থায় ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দিঘির পানিতে ও পাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ময়লার স্তূপ।

গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় লালদিঘির তিন পাড়ে রোড-ড্রেন নির্মাণ হয়। সরকারি অর্থায়নে এই কাজে এক কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার ৫৪৭ টাকা ব্যয় হয়। যৌথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যশোর পৌরসভা ও এলজিইডি।

দিঘির পাড় বাঁধতে পশ্চিম পাশে বসানো ব্লকগুলো আগলা হয়ে গেছে। যেকোনো সময় পাড়টি ধসে যেতে পারে। জেলা বিএনপি কার্যালয় সংলগ্ন এই পশ্চিম পাড়ের হাঁটার পথে ভাঙন ধরেছে। ভারী যানবাহনের চাপে হাঁটার পথে বসানো কংক্রিটের ব্লক ভেঙে দেবে গেছে। এই অংশের হাঁটার পথে ‘ভাজাপোড়ার’ হোটেল বসিয়ে ব্যবসা চলছে।

এখানকার বসার কংক্রিটের বেঞ্চটি হোটেলের খদ্দের বসার কাজে ব্যবহার হয়। এর ঠিক পাশেই আলী রেজা রাজু মঞ্চটির চারপাশজুড়ে প্রস্রাবের দুর্গন্ধ। অসচেতন নাগরিকদের কেউ কেউ স্থানটিকে এভাবে নোংরা করেছে। একই রকম অবস্থা বিএনপি অফিস সংলগ্ন নির্মাণাধীন পৌরসভা হ্যারিটেজ ভবনের পেছনের অংশ।

দিঘির পূর্বপাড় মনে হয় একটি ময়লার ভাগাড়। স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে ময়লা ফেলে স্তূপ করে রাখেন। মঞ্চের পাশের হাঁটার পথটিও চায়ের দোকানে দখল। পূর্ব ও দক্ষিণ পাড়টি দখল করে রাখে কার-মাইক্রো ও মোটরসাইকেল।

মন্দির সংলগ্ন রাস্তার বাঁকে বালু ফেলে রাখা হয়েছে। যেটি মোটরসাইকেল ও সাইকেল চালকদের জন্য হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। পূর্বদিকের এই পাশটিতেও গড়ে উঠেছে চায়ের দোকান। মোবাইল শোরুমগুলো প্রায়ই বড় আকৃতির ছাতা মেলে মোবাইল ফোন বিকিকিনির পসরা সাজিয়ে বসে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দোকানপাট কার মাইক্রোর দখলে থাকায় দিঘির পাড় দিয়ে হাঁটাচলা যায় না। পাশের সড়কটি অনেক ব্যস্ততম। দিনভর রিকশা, ইজিবাইক, ভ্যানসহ বিভিন্ন যান চলাচলের বিরতি থাকে না। দিঘির পাড়ের হাঁটার রাস্তাটি তারা আগে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহার করতেন। দখলের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন।

‘জনউদ্যোগ যশোর’র আহ্বায়ক প্রকৌশলী নাজির আহমেদ বলেন, ‘লালদিঘির এখন বেওয়ারিশ অবস্থা। এটির করুণ দশা দেখার কেউ নেই। দখলমুক্ত করে দিঘির চারপাশ উন্মুক্ত করা হয়েছিল নাগরিক বিনোদনের জন্য। কিন্তু দিঘির চারপাশ আবারো দখল হয়ে গেছে। হাঁটাচলার জন্য যে পথ বানানো হয়েছিল সেখানে দোকান বসানো হয়েছে। আলী রাজু মঞ্চটিরও যে রকম অবস্থা; সেখানে কেউ বসে সময় কাটাবেÑ সেই অবস্থা নেই। মার্কেট ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে পৌরসভাও দিঘির বেশ খানিকটা ভরাট করে ফেলেছে।’

তিনি বলেন, দিঘির সংস্কার ও চারপাশের উন্নয়ন নাগরিক আন্দোলনের ফসল। কিন্তু সেটি এখন ভেস্তে গেছে। পরিস্থিতি এখন এমনই নতুন করে আবারো আন্দোলনে নামতে হবে।

বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্কসবাদী) জেলা সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘বিভিন্ন সময় পৌরসভা লালদিঘি ভরাটের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু নাগরিকদের আন্দোলনের মুখে পিছু হটেছে। পৌর মার্কেট নির্মাণ করতে গিয়ে ভবনের বেশ খানিকটা অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে দিঘির মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে লালদিঘি ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। যেটুকু সংস্কার হয়েছে সেটি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।’

এ ব্যাপারে যশোর পৌরসভার সচিব আজমল হোসেন জানান, স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দিঘির পাড়ে ময়লা ফেলেন। পুরাতন পৌরসভা সংলগ্ন হরিজন পল্লীর বাসিন্দাদের ফেলা ময়লায় নোংরা হচ্ছে দিঘির পানি। যেহেতু লালদিঘি পৌরসভার আওতাধীন। তাই সংস্কারের দায়িত্বও পৌরসভার ওপর বর্তায়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।