বাংলাদেশকে বলা হয় ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ’। যুগ যুগ ধরে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশ টিকে আছে। প্রতি বছর ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, নদীভাঙন, তুষারপাত, আর্সেনিক, লবণাক্ততা, সুনামি ও কালবৈশাখী ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাংলাদেশ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে। জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে দুর্যোগ প্রশমনে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি হ্র্রাসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বর্তমানে বিশ্বে ‘রোল মডেল’। সরকারের গৃহীত ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে সব ধরনের দুর্যোগ সহনীয় রাষ্ট্র। ‘জাতীয় দুর্যোগ প্রস্তুতি দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে আসে।
পৃথিবীর প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ দেশ ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্য, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রভৃতি কারণে প্রায় প্রতি বছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে আক্রান্ত হয়।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বেড়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, গত ৫০ বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সাতটি বড় বন্যা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা বড় হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকা একসঙ্গে সক্রিয় হওয়ায় বড় বন্যা হয়। ১৯৮৭ সালে দেশের ৪০ শতাংশের বেশি আর ১৯৮৮ সালে ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়। ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয় ১৯৯৮ সালের বন্যায়। পাঁচ-ছয় বছর ধরে দেশে বন্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোয় (বিবিএস) দেখানো হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন সপ্তম। তবে দুর্যোগের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতির হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে পঞ্চম। ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রাণহানি কমানো, দুর্যোগ মোকাবিলার কাঠামোবদ্ধ মডেল প্রস্তুত করা এবং তা অন্য বেশ কয়েকটি দেশ কর্তৃক অনুসরণসহ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবিলায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করছে। তবে এ খাতে এখনো যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ আছে। কাজেই আত্মতুষ্টিতে না ভুগে উদ্যোমী কর্মতৎপরতা বজায় রাখতে হবে। ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখনো বছরে জাতীয় আয়ের বড় অংশ ক্ষতি হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে দুর্যোগ প্রশমন কার্যক্রম গতিশীল রাখতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে সিপিপির যাত্রা শুরু করেছিলেন, যারা আগাম সতর্কসংকেত প্রচার এবং সন্ধান ও উদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের জানমাল রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রেখে আসছেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা ৭৬ হাজার ২০ জনে উন্নীত হয়েছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, পরিশ্রম আর দূরদর্শী পরিকল্পনা এবং নতুন নতুন কৌশলকে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে আজ সারা বিশ্বের কাছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনুকরণীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) নেতৃত্বে রয়েছে বাংলাদেশ। দুর্যোগ প্রশমন ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে ধীরে ধীরে স্থায়ী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। গৃহীত কর্মপরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন ঘটলে দুর্যোগ মোকাবিলায় আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।