যাকে নিয়ে এত আলোচনা, তিনি আছেন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে। অবাক হলেও করার কিছু নেই। সামনের দিনগুলোতে তাকে পাওয়া যাবে বলেই আশ^স্ত হয়েছেন নির্বাচকমণ্ডলী। ফলে তিন সংস্করণের চুক্তিতেই থাকছেন সাকিব আল হাসান।
বিসিবির এই বছরের কেন্দ্রীয় চুক্তিতে সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক তিন সংস্করণেই সাকিবকে রেখে দেওয়া। গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট সফরে সাকিব যাননি পারিবারিক কারণে ছুটি পাওয়ায়। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন না শারীরক ও মানসিকভাবে খেলার মতো অবস্থায় না থাকায়। গত বছর শ্রীলঙ্কাতেও টেস্ট সফরে তিনি যাননি।
এমন একজনকে টেস্ট চুক্তিতে রাখায় প্রশ্ন স্বাভাবিক। চুক্তির তালিকা প্রকাশ করার পরদিন গতকাল সকালে বিসিবিতে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাকিবকে রাখার ব্যাখ্যা দেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।
তিনি বলেন, ‘বোর্ড ওকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্রাম দিয়েছে। এরপর থেকে ওকে পাওয়া যাবে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে তিন সংস্করণেই ওকে পাওয়া যাবে। খেলোয়াড় হিসেবে অনেক বড় মাপের, বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারদের একজন। সেই হিসেবে ওর কাছ থেকে সেরাটাই আমরা চাই, যখনই ওকে পাব। সেজন্য ওকে তিন সংস্করণেই রাখা হয়েছে, যেহেতু এ বছর আমাদের অনেক খেলা আছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আগামী এক বছর আমরা সাকিবের কাছ থেকে আরো ভালো পারফরম্যান্স চাচ্ছি। আমরা প্রায় এক মাস আগে এই তালিকা জমা দিয়েছি। ও আসলে অবশ্যই কথা বলব। ২০২২ সালে তিন ফরম্যাটেই অনেক খেলা আছে। সেই হিসেবে আমাদের অনেক খেলোয়াড় লাগবে। সেরা খেলোয়াড়কে আমরা সবসময়ই তিন ফরম্যাটে চাই। আশা করছি, রিফ্রেশ হয়ে ফিরে এসে তিন ফরম্যাটেই খেলবে।’
নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক যোগ করলেন প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা। তিনি বলেন, ‘কেউ দুই-একটি সিরিজ বিশ্রাম নিলেই যে তিন সংস্করণে রাখা যাবে না, তা তো নয়। প্রথমে কিন্তু ক্রিকেট বোর্ড কথা বলেছে, কে কোন ফরম্যাটে খেলতে চায়। তার পর বিবেচনা করা হয়েছে যে কাকে কোন ফরম্যাটে রাখা যাবে। সাকিব কিন্তু কোনো ফরম্যাট থেকে সরে যায়নি। সাকিব যে মাপের ক্রিকেটার, কোনো ফরম্যাট থেকে নিজে সরে না গেলে বোর্ডের জন্য সরিয়ে দেওয়া কঠিন, কারণ যে মাপের পারফর্মার ও।’
‘সাকিব কিন্তু এখনো কোনো ফরম্যাট থেকে সরে যায়নি। সাকিব এই মাপের খেলোয়াড় যে নিজে থেকে কোনো ফরম্যাট থেকে সরে না গেলে ক্রিকেট বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া কঠিন। এখনো সাকিবের সঙ্গে আমাদের ওরকমভাবে কথা হয়নি। যেহেতু হয়নি, হুট করে একটা কথা বলে দেওয়া ঠিক না। কথা হলে জানতে পারবেন। আপনি যদি নির্বাচক হতেন কী করতেন? সাকিবকে বাদ দিতেন না রাখতেন?’
পারফরমার হিসেবে সাকিবকে নিয়ে প্রশ্ন আছে সামান্যই। টেস্টে খেলতে তার অনীহা থেকেই জন্ম প্রশ্নগুলোর। গত রোববার দুবাই যাওয়ার আগে সাকিব বলে যান, আগামী নভেম্বরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত টেস্ট থেকে বিরতি চেয়ে বোর্ডে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। যদিও সেই চাওয়া পূরণ করেনি বোর্ড। গত বুধবার সাকিবকে বিশ্রাম দেওয়ার সংবাদ সম্মেলনে বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস জানান, নভেম্বর পর্যন্ত টেস্ট খেলতে না চাওয়ার সেই দাবি থেকে সরে এসেছেন সাকিব।
দুবাই থেকে ফিরেছেন সাকিব। তার সঙ্গে কথা বলে ভবিষ্যৎ আরো স্পষ্ট করা হবে বলে জানালেন মিনহাজুল। তিনি বলেন, ‘আমরা এই তালিকা জমা দিয়েছি এক মাস আগে। বোর্ড তার পর অনুমোদন দিয়েছে। দুবাই থেকে সাকিব ফিরেছে, ওর সঙ্গে নিশ্চয়ই কথা হবে।’
স্কোয়াড ঘোষণার পর কেউ যদি সরে যায়, বিষয়টি খারাপ লাগে কিনা কিংবা বিব্রতকর কিনা। তা স্বীকার করলেন নান্নু, ‘অবশ্যই (খারাপ লাগে), কারণ এখানে একটা পরিকল্পনা অবশ্যই থাকে। নির্বাচকরা ও টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে পরিকল্পনা করে দল দেওয়া হয়। এরপর বোর্ডও অনুমোদন দেয়। না যাওয়াটা অবশ্যই ব্যাকফায়ারের মতো হয়। কাউকে তো জোর করে খেলানো যায় না।’
তাহলে তামিম কেন নয়? ছয় মাস পর তো টি-টোয়েন্টিতে ফিরবে সেও। এ প্রসঙ্গে নান্নু বলেন, ‘এখানে একটা সিস্টেম আছে- যে যে ফরম্যাটে অফ আছে এখন... তামিম যদি ওই ফরম্যাটে দলে অন্তর্ভুক্ত হয় সেও বেতনের আওতায় চলে আসে। এখানে আক্ষেপের কিছু নেই। তামিম ছয় মাস পর টি-টোয়েন্টি দলে অন্তর্ভুক্ত হলে অবশ্যই বেতনভুক্তদের তালিকায় ঢুকে যাবে।’