logo
আপডেট : ১১ মার্চ, ২০২২ ২১:৫৯
ছুটির দিনে শিশুদের কেনাকাটার ধুম
ইফফাত শরীফ

ছুটির দিনে শিশুদের কেনাকাটার ধুম

অমর একুশে বইমেলায় বর্ধিত সময়ে এসে শেষবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে শিশুপ্রহর। দেখতে দেখতে প্রাণের মেলার সময় শেষের দিকে। বইমেলার শেষ শুক্রবার ছিল আজ। আর শেষ ছুটির দিন হচ্ছে আগামীকাল শনিবার। পরবর্তী বৃহস্পতিবার মেলা শেষ। অতএব, ছুটির দিন আর পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে আজ মেলায় উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। অন্যদিনের চেয়ে শিশু কর্নারে ভিড়টা ছিল একটু বেশিই।

শিশুরা ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দের বই কিনতে সময়টা কম নিয়েছে। অন্যান্য দিন যেমন পাঠকরা মেলায় ঘোরাঘুরি করে চলে যেত, শুক্রবার তা হয়নি। অনেকেই বই কিনে বাড়ি ফিরেছেন।

বাবা-মায়ের হাত ধরে আসা শিশুদের পদচারণায় মেলার শিশু চত্বর যেন পরিণত হয়েছিল কচি-কাঁচার মেলায়। মায়ের হাত ছেড়ে রঙিন মলাটের বইয়ের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়া, সমবয়সি অন্য কোনো শিশু দেখে আনন্দে চিৎকার দিয়ে ওঠা। কখনো বা পছন্দের বই কিনে না দেওয়ায় বিরতিহীন কান্নায় ভেঙে পড়ার দৃশ্য এই চত্বরকে দিয়েছে অন্য রকম আবহ। সিসিমপুরের হালুম, ইকরি, শিকু ও টুনটুনির পরিবেশনা শিশুদের আনন্দে যুক্ত করেছে আলাদা এক মাত্রা।

সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অমর একুশে বইমেলার মূল আকর্ষণ ছিল শিশু চত্বর। ছুটির দিন হিসেবে শিশুদের আগমনে এই মেলা প্রাণবন্ত রূপ নেয়।

শিশুদের হই হুল্লোড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যস্ততাও বেড়েছে বইয়ের স্টলগুলোতে। ভূতের গল্প, বৈজ্ঞানিক কল্প-কাহিনি, রূপকথা, ঠাকুমার ঝুলিসহ আঁকার বইয়ের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বেশি বলে জানিয়েছেন স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধিরা।

আলাদাভাবে শিশুদের নজরে আছে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক পপ আপ বইগুলোতেও। পপআপ ও ডাই কার্ড বইগুলোতে লেখার বিষয়বস্তুর দৃশ্য নানাভাবে তুলে ধরার কারণে শিশুরা বেশি আকর্ষণবোধ করছে।

প্রগতি পাবলিশার্সের জনসংযোগ কর্মকর্তা রাফিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমাদের স্টলে শিশুদের বিভিন্ন ডাই কার্ড, পপ আপ, গল্পের বই পাওয়া যাচ্ছে। অন্য বইগুলোর থেকে এসব বইয়ে ছবির উপস্থাপন অনেক বেশি জীবন্ত ও ভিন্নতা থাকায় শিশুদের টানছে বেশি। দাম বেশি হলেও বিক্রি কম না এসব বইয়ের। আমাদের এখানে সর্বাধিক বিক্রিকৃত পপ আপ বই হচ্ছে মহাশূন্যের ওপর বইটি। বইটির মূল্য ৩৭৫ টাকা। মহাশূন্যের ওপর বইটি এখন পর্যন্ত ১ হাজারের বেশি বিক্রি হয়েছে।

মায়ের সঙ্গে বই কিনতে মেলায় এসেছে আমায়রা। চার বছর বয়সী এই খুদে পাঠক ঠাকুমার ঝুলি, আঁকার বই ও নীতিকথামূলক বই কিনেছে। তারপর চোখ আটকে গেছে পপ আপ বইয়ের ওপর। বায়না ধরায় সেটাও কিনে দেওয়ার জন্য। ফুল,পাখি, গাছ আর মাছ নিয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা পপ আপ বইগুলো বাছাই করছিলেন তার মা নূর-ই আফসানা জ্যোতি। বেসরকারি চাকরিজীবী এই নারী সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের।

তিনি বলেন, বাচ্চার বয়স যেহেতু ৪ বছর তাকে বইয়ের সঙ্গে পরিচিত করানোর জন্য বইমেলায় নিয়ে এসেছি। যে বইটাই পছন্দ হচ্ছে সেটা খুলেই স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করে দিচ্ছে। চারটা বই কেনার পরে এখন তার বায়না পপ আপ বই কিনে দিতে হবে। এছাড়া বাচ্চা গল্প পড়া বা শোনার আগ্রহ জন্মাচ্ছে তাই কিছু রূপকথার গল্পের বই কিনে দেব। তবে বইয়ে ব্যাপারে বাচ্চাদের তখনই আগ্রহ হবে যখন সে কোন গল্পের চরিত্রগুলো সম্পর্কে জানবে।

শিশু চত্বরে ‘শব্দ শিল্প’ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক এহসানের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি বলেন, আমাদের স্টলে শিশুদের সাধারণ জ্ঞানের বইগুলো বেশি চলছে। তবে এখনকার বাবা-মায়েরা একদম ছোট বাচ্চাদের জন্য শখ করে বই নিয়ে যাচ্ছে। এই অভিভাবকরা বেশির ভাগই বাচ্চাদের জন্য ড্রইং করার বই এবং প্রাণী ও পশু-পাখির বইগুলো খোঁজে। তবে একটু বড় যাদের বয়স ৮-১০ বছর তাদের জন্য গল্পের বইগুলো নিচ্ছে।

তবে প্রকাশকরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি মাস শেষ হবার পর থেকে বেচাবিক্রি অনেকটা কমে গেছে। শুধুমাত্র শুক্র ও শনিবার ছাড়া পুরো সপ্তাহ বসে সময় কাটে বলে জানিয়েছেন স্টলগুলোর বিক্রয় কর্মীরা। যদিও করোনার মধ্যে গত দুই বছরের চেয়ে এবার বেচা বিক্রি ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা।