logo
আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২২ ১০:৩০
ভেঙে ফেলা হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা
মোহাম্মদ বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ

ভেঙে ফেলা হচ্ছে না অবৈধ ইটভাটা

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার একটি অবৈধ্য ইটভাটা

বায়ুদূষণের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পাঁচ জেলার সব অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে ১২৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। সেগুলোতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান শুরু করেছেন। তবে ধ্বংস নয়, জরিমানা ও বন্ধ করে দিয়ে ফিরে আসছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের কারণে অবৈধ ইটভাটা ভাঙতে পারেন না সংশ্লিষ্টরা। ফলে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় মোট ইটভাটার সংখ্যা ২৯৪টি। তার মধ্যে ১২৩টি অবৈধ। সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা।

সদরে ১১৩ ইটভাটা রয়েছে। তার মধ্যে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যাই ৭৩টি। আর পরিবেশে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে এমন ভাটাও মাত্র তিনটি।

বায়ুদূষণের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অন্য চারটি জেলাসহ নারায়ণগঞ্জে এসব অবৈধ ইঁভাটা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ ইটভাটা গুঁড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে বিভিন্ন জেলার মতো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ অধিপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান শুরু করেছে।

নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন ভোরের আকাশকে বলেন, ‘গত সোমবার বন্দরের কেওডালা এলাকায় অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না থাকাসহ নানা কারণে আইনভঙ্গ করায় ১৬ ভাটাকে ৪৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, ‘অভিযানে একটি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা গত সময় বিভিন্ন বৈধ ইটভাটার চিমনি, কিল ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছি। কিন্তু কিছুদিন পরই সেগুলো আবার মেরামত করে নতুন চালু করা হয়েছে।

তালিকা অনুসারে বিভিন্ন ভাটায় অভিযান করায় একই জায়গায় বার বার যাওয়া সম্ভব হয় না। তাই পুনরায় অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠে।’
সরেজমিন সদর উপজেলার বক্তবলী ও আলীরটেক ইউনিয়নের বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে অর্ধশত ইটভাটার চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বেড় হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে। একই অবস্থা বন্দরের কেওডারা এলাকায়। রূপগঞ্জের ভাটাগুলোর কালো ধোঁয়াও ছড়িয়ে পড়ে আশাপাশের বাড়িঘরে।

ভাটাগুলোতে ইট পোড়ানোর দৃশ্য দূর থেকেই দেখা যায়। এসব ইটভাটার মধ্যে অনেকগুলোরই জেলা প্রশাসনের সনদ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এ ছাড়া আইন লঙ্ঘন করে জ্বালানি কাঠ পোড়ানোসহ ফসলি জমি, লোকালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।

এসব গ্রামের বাসিন্দা জানান, ভোর থেকে একের পর ভাটা থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়। সেই ধোঁয়ায় তাদের ঘরও অন্ধকার হয়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসনকে তারা ভাটাগুলোতে অভিযান করতে দেখেন খুব কম। প্রশাসনের লোকজন জমিরানা করে বন্ধ করে দিলেও কয়েকদিনের মধ্যে তা আবার চলতে থাকে।

গ্রামবাসী বলেন, বছরের ছয় মাস ভাটাগুলো থেকে ধোঁয়া বের হয়। ফলে যেমনি বায়ুদূষণ হয় তেমনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন তারা। গ্রামের মানুষ অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসের দাবি জানান।

বেশির ভাগ ইটভাটার সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালীরা জড়িত বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পরিবেশবাদী আন্দোলনের সভাপতি এ বি সিদ্দিক। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্টরা অভিযান করলেও অবৈধ ইটভাটা ভাঙতে পারছে না। তারা সাময়িক বন্ধ অথবা জরিমানা করলে আবার ভাটাগুলো চালু হয়ে যায়। ফলে বায়ুদূষণও বাড়তে থাকে।’

সবুজ আন্দোলনের সদস্য সচিব দিনা আমিন বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে নারায়ণগঞ্জের অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের তদারকি করতে হবে যাতে করে তারা অবৈধভাবে ইটভাটা গড়তে না পারে। এ জন্য জেলা প্রশাসনের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।’

আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নূর উদ্দিন বলেন, ‘এ শহরের প্রধান নদী শীতলক্ষ্যার পানি দূষিত। এ শহরের ইটভাটাগুলোর কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে।’ এ সময় তিনি নারায়ণগঞ্জের সব অবৈধ ইটভাটা ধ্বংসের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মঞ্জরুল হাফিস ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমরা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সব অবৈধ ইটভাটা ধ্বংস করতে অভিযান শুরু করছি। যে যে এলাকায় অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সেখানে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান করে ভাটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’

গত ১ মার্চ ঢাকা নারায়ণগঞ্জসহ আশপাশের পাঁচ জেলার বায়ুদূষণের মাত্রাকে ‘ভয়াবহ পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে ১৫ দিনের মধ্যে অবৈধ সব ইটভাটা ধ্বংসের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব জেলার প্রশাসক এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে অবিলম্বে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) সম্পূরক আবেদনে হাইকোর্ট এ আদেশ দেন।