কৃষি অর্থনীতিনির্ভর জেলা নীলফামারী। জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন কৃষি। এ জেলার উর্বর দোআঁশ, বেলে দোআঁশ মাটিতে ধান, গম, সরিষা, পাট, কমলা, মালটা, আপেলকুল, চা, আম, লিচু, ড্রাগন, আদা বাদেও বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ হয়ে থাকে।
এর মধ্যে অন্যতম রবিশস্য ভুট্টা। এটি চাষ ও বিক্রিতে তেমন কোনো কষ্ট নেই বললেই চলে। ফসল ওঠা মাত্রই খুব সহজে কৃষকরা তা বিক্রিও করছেন। ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা ঝুঁকেছেন লাভজনক পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল ভুট্টা আবাদে।
মূলত ভুট্টা এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বদলে দিয়েছে মানুষের জীবন-জীবিকা। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজ পাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
যদিও এক সময় চরাঞ্চলের মানুষ না খেয়ে কষ্টে দিন পার করত; কিন্তু কয়েক বছর ধরে চর এলাকার চেহারা বদলে গেছে। বালুচরে ভুট্টা চাষ করে বদলে গেছে তাদের জীবন। গ্রামগুলোয় খড়ের ঘরের পরিবর্তে উঠেছে আধাপাকা ঘর। এখন আর না খেয়ে থাকতে হয় না তাদের।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ডিমলায় ২ হাজার ৯৪৫ হেক্টর ও জলঢাকায় ৩২৮ হেক্টর জমি চর বেষ্টিত। ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী, খালিশা চাপানী, টেপাখড়িবাড়ী, পূর্ব ছাতনাই, গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী ও শোলমারী ইউনিয়নে তিস্তার ছোট বড় প্রায় ২৩টি জেগে ওঠা চওে ভুট্টার চাষ হচ্ছে।
জেলায় গত বছর ২৩ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। চলতি বছর ভুট্টা চাষের জমির পরিমাণ আরো প্রায় দুই হাজার হেক্টর বেড়েছে। প্রতি বছর তামাক চাষ ছেড়ে দিয়ে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা। এ বছর ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।
ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘায় প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘায় ভুট্টার ফলন আসে ৩৫-৪০ মণ। বাজারে নতুন ভুট্টার মণ ৬শ-৭শ টাকা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ সবুজের সমারোহ। কৃষকরা কাজে ব্যস্ত। সবুজ পাতায় স্বপ্ন বুনছেন তারা। ইতোমধ্যে কোথাও কোথাও গাছে ফুল আসা শুরু হয়েছে। বোরো ধানের আবাদে খরচ বেশি হওয়ায় ভুট্টার চাষে বেশি আগ্রহ চরাঞ্চলের কৃষকদের।
ঝড়সিংহেশ্বর গ্রামের কৃষক নয়ন মিয়া বলেন, ‘বোরো ধানের চাইতে ভুট্টায় লাভ বেশি। এ জন্য আমরা ভুট্টা চাষ করি। ভুট্টায় প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৯-১০ হাজার টাকা। আর ৪০-৪৫ মণ ভুট্টা পাই। যদি ভালো দাম পাই, তা হলে আশা করছি লাভবান হব।’
একই এলাকার আরেক কৃষক সমসের আলী বলেন, ‘আমি চার বিঘা জায়গায় ভুট্টা লাগাইছি, আমার ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। যদি ন্যায্যমূল্য পাই তা হলে দেড় লাখ টাকার ভুট্টা বিক্রি করতে পারব।’
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ডিমলা উপজেলায় ৯টি চর রয়েছে। এই চরগুলো এক সময় পতিত পড়ে থাকত। বর্তমানে সেখানে ভুট্টার চাষ হয়েছে। আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে এবং সার্বিক পরিস্থিতি, বাজারমূল্য ভালো থাকেÑ তবে এ এলাকায় ভুট্টা চাষ আরো বাড়বে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ভুট্টা আবাদে কৃষি বিভাগ কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দিচ্ছে। মাঠকর্মীরা সার্বক্ষণিক তাদের পাশে রয়েছে।