logo
আপডেট : ১২ মার্চ, ২০২২ ১৫:৫৬
বিচারপতিরা লর্ড মেকলের চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি পাননি: ডা. জাফরুল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচারপতিরা লর্ড মেকলের চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি পাননি: ডা. জাফরুল্লাহ

গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, বিচারপতিরা লর্ড মেকলের চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি পান নাই। তা না হলে যেখানে হাইকোর্টে ৫ থেকে ৬ লাখ মামলা বিচারের অপেক্ষায় আছে, সেখানে জজ সাহেবরা ঘুমান কী করে? 

শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে প্রখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্মরণসভায় বিচারপতি মো. আবদুল মতিন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, মালয়েশিয়ায় বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এ ধরনের সমস্যা ছিল, সেখানে মাহাথির মোহাম্মদ বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থার পেন্ডিং মামলাগুলো নিষ্পত্তি করেছেন। আমাদেরও বিদেশি বিচার ব্যবস্থা থেকে শেখা উচিত।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে নিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় ইংল্যান্ডে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যারা ইংল্যান্ডে যেতেন তাদের বাসস্থানের ব্যবস্থা নিয়ে সেখানে তিনি আন্দোলন করছিলেন সেসময়। এমন কী মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যারিস্টার মওদুদ এবং আমিনুল ইসলাম প্রবাসী সরকারকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে তিনি বলেন, এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা এক ব্যক্তির ইতিহাসে পরিণত করেছি, কিন্তু কোনো জাতি এক ব্যক্তি দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। দেশ স্বাধীনের পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যারা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন সকলের অবদান রয়েছে। প্রবাসী সরকারের অ্যাডভাইজার তাজউদ্দিন আহমেদ, মাওলানা ভাসানী, মুজাফফর আহমেদসহ সবারই অবদান রয়েছে।

তাজউদ্দিন আহমেদের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তাজউদ্দীন ভাই সবসময় বলতেন, ‘জাফরুল্লাহ, আমি আলজেরিয়ার ইতিহাস জানি। এ দেশ যখন স্বাধীন হবে তখন হয়তো আমি থাকবো না। এটাই হলো জাতির দুর্ভাগ্য।’’

যারা জাতিকে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা সবসময় স্মরণযোগ্য হয় না। সেই একই অবস্থা হয়েছে আমিনুল ইসলাম, ব্যারিস্টার মওদুদের এবং আমাদের প্রবাসী সরকার তাজউদ্দিন আহমেদের ক্ষেত্রে। তাই তাদের ভুলে না গিয়ে আমাদের উচিত মনে রাখা ।

দুর্ভিক্ষের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি আরো বলেন, ১৯৭৪ সালে দুঃশাসনের কারণে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল। সে সময় অমর্ত্য সেন তার বইয়ে লিখেছেন ওই বছর সবচেয়ে বেশি খাদ্য উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভিক্ষ হওয়ায় তিন লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল।

সেই দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি আবারো শোনা যাচ্ছে। অনাহারে মারা যাচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু অর্ধাহার ও অপুষ্টিতে আছে মানুষ। টিসিবির লাইনে আগে সাধারণ মহিলা ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাজের লোকেরা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। এখন মধ্যবিত্তরা টিসিবির লাইনে দাঁড়ান। যেন অতিরিক্ত খাদ্য পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও আমাদের উদ্বৃত্ত তহবিল ছিল ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এখন নাকি ৪৩ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। এই চার বিলিয়ন ডলার কোথায় গেল। আমরা কোথাও জবাবদিহিতার দাবিও করছি না, তাই সরকার জবাবদিহিতাও করছে না।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একবার ভাবেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে উদ্যোগ নিয়েছিল সেটা যদি সেই দেশের সেনাবাহিনী প্রধান আর বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন দিত তাহলে আমেরিকান ডেমোক্রেসির কি অবস্থা হতো?

কিন্তু সে দেশের সেনাপ্রধান সেটা করেননি। আর আমার দেশের সেনাপ্রধান, আমি শুধু বর্তমান সেনা প্রধানের উদ্দেশেই বলছি না। সে রকমটা পারবে না। পুলিশ প্রধান বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতা বলেন আর বুদ্ধিজীবী বলেন প্রত্যেকেই নিজের বিশ্বাস গিলে ফেলে তারপর কথা বলছি, যাতে আমার নেতা সন্তুষ্ট হন।