logo
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০২২ ০৮:৫৮
অস্তিত্ব সংকটে কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি
জহির রায়হান, বরিশাল

অস্তিত্ব সংকটে কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি

কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি মিলনায়তন ও পাঠাগার

বরিশাল তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সুপরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম রূপসী আর আধুনিক বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। বরিশাল জেলাকে বিশ্বের বুকে পরিচয় করে দিলেও অসাধারণ এই কবিকে যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি।

মৃত্যুর ৬৮ বছর পেরিয়ে গেলেও জীবনানন্দ দাশের নামে নেই কোনো উল্লেখযোগ্য স্থাপনা। আর যেসব আছে তারও আবার নেই পর্যাপ্ত কদর ও সংরক্ষণ। ফলে দিন দিন দেখা দিয়েছে কবির স্মৃতি রক্ষার সংকট।

জানা গেছে, বরিশাল নগরীর বগুড়া রোড এলাকায় কবি জীবনানন্দ দাশের মূল জন্মভিটা আজ নানা জটিলতায় দখল হয়ে গেছে। এছাড়া এখনো বরিশালে তার নামে নির্মাণ হয়নি কোনো বড় ধরনের স্থাপনা আর ভাস্কর্য।

তবে ২০১০ সালে কবি জীবনানন্দ দাশের স্মৃতি রক্ষায় অল্প জায়গাজুড়ে দ্বিতীয়তলা বিশিষ্ট মিলনায়তন ও পাঠাগার ভবন নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করা হয়। ভবনের সামনের দেয়ালে কবি জীবনানন্দ দাশের ছবি সংবলিত একটি স্মৃতিফলক রয়েছে।

এছাড়াও কবির নামে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হল, সরকারি বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে মুক্তমঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া ও হলসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষ রয়েছে।

তবে বিএম কলেজে পড়েও অনেকে জানেন না কোন হলটি কবি জীবনানন্দ দাশের নামে। আবার অনেকে জানলেও অকপটে বলে ‘হিন্দু হল’।

বরিশাল জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি প্রেম ও দর্শন নতুন প্রজন্মকে ছড়িয়ে দিতে বিভিন্ন সম্মেলন, সেমিনার আয়োজন করা হয়। এছাড়া কবির সাহিত্য কর্ম সংরক্ষণ, প্রকাশ ও প্রচারে তার স্মৃতিবিজড়িত বরিশাল শহরে তার নামে একটি ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রস্তাব করেন বরিশাল জেলা প্রশাসন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে কবি জীবনানন্দ দাশ ইনস্টিটিউট স্থাপনে ২০২১ সালের ১৭ আগস্ট সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আহমেদ শিবলী বরিশাল জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বগুড়া রোডের কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কে নির্মিত কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তনটি বন্ধ রয়েছে। কেচিগেটটি তালাবদ্ধ। উঁকিঝুঁকি ছাড়া কোনো দেখার উপায় নেই।

স্থানীয় নয়ন নামে এক চায়ের দোকানি বলেন, প্রায়ই দেখি কবির পাঠাগারের সামনে বিভিন্ন গাড়ি এসে থামে। পাঠাগারটি বন্ধ পেয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে আবার চলে যান তারা। অনেকেই আবার বলে বরিশালবাসী কবিকে ঠিকভাবে ইজ্জত দিতে পারেনি।

নিখিল মজুমদার নামে বিএম কলেজ শিক্ষার্থী জানান, কবি জীবনানন্দ দাশের নামে বিএম কলেজের হলটিতে মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের ছাত্ররা থাকেন বলেই হলটিকে সবাই হিন্দু হল (ছাত্রাবাস) নামে চেনেন এবং বলেন।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র পাঠচক্র বরিশালের সমন্বয়কারী বাহাউদ্দিন গোলাপ বলেন, ‘কবি জীবনানন্দের শহর আমাদের এই বরিশাল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই শহরে তার বসতভিটাও সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ আমরা।’

বরিশালের কবি ও লেখক হেনরী স্বপন বলেন, ‘দেশ-বিদেশে সর্বত্র যখন কবি জীবনানন্দ দাশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে তখন বরিশালে কবির গ্রহণযোগ্যতা কমতে শুরু করেছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় তার জন্মভিটাও আজ দখল হয়ে গেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাঠাগারে কবির লেখা সব বই সংরক্ষণ নেই। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়ানো-ছিটানো যে স্মৃতি আছে তা আবার সঠিক ব্যবহার আর সংরক্ষণ হচ্ছে না। বরিশাল শহরে বসবাসরত মানুষের অবহেলা আর অগ্রহণযোগ্যতায় দিনে দিনে দেখা দিয়েছে কবি জীবননান্দের স্মৃতির অস্তিত্ব সংকট।’

সরকারি বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশ আমাদের কলেজের সঙ্গে মিশে আছেন। তার নামে ইতোমধ্যে একটি চত্বর, মঞ্চ, ক্যাফেটেরিয়া ও ছাত্রাবাস রয়েছে। ইতোমধ্যে তার নামে বিএম কলেজে একটি ম্যুরাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অনুমতি সাপেক্ষে দ্রুত ম্যুরালটি নির্মিত করা হবে বলে জানান তিনি।

বরিশালের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিরক্ষায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ কবির নামে যেসব স্থাপনা রয়েছে তার সংরক্ষণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিশ্ব কাব্যসাহিত্যের অসাধারণ মেধাবি বাঙালি কবি জীবনান্দ দাশ কলকাতায় ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর মারা যান। তিনি ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশাল নগরীর বগুড়া রোড এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।