আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার রাতের এ ঘটনায় আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কয়েকজন নবীন শিক্ষার্থীকে দলে ভেড়ানোকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীরা সভাপতি গ্রুপের একজনকে টিএসসিতে মারধর করে। পরে সভাপতি গ্রুপের কয়েকজন ক্যাম্পাসে এসে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের দুইজনকে মারধর করে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসের পাশাপাশি উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে পুরান ঢাকার মালিটোলা এলাকায়। এক পর্যায়ে মালিটোলা পার্কে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ হয়।
এতে সভাপতি গ্রুপের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের গাজী মো. শামসুল হুদা ও খাইরুল আমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আব্দুল বারেক, ফিন্যান্স বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. সাঈদ আহত হন। আহত হন সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের ইসলামিক স্টাডিজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মেরাজ হোসাইন।
এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুই গ্রুপের কর্মীদের লাঠি হাতে শোডাউন দিতে দেখা যায়। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মালিটোলা পার্কের সংঘর্ষে আহত পাঁচজনকেই প্রথমে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পড়তে আসা এক শিক্ষার্থী। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বলেন, ‘এখন ক্যাম্পাসে কথা বলতেও ভয় হয়। ছোট্ট এই ক্যাম্পাসে একটু পর পর একেক গ্রুপ এসে যখন স্লোগান দেয়, তখন আমাদের পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হয়। নতুন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েই যেন বিড়ম্বনায় পড়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৬ ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘মেইন গেইট দিয়ে প্রবেশ করে সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে যেতে হলে রফিক ভবনের সামনে দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু রফিক ভবনের সামনে সব সময় ছাত্রলীগ জমায়েত হয়ে রাস্তা প্রায় বন্ধ করে রাখে। কম হলেও ১০-১৫ জনের কাছে পরিচয় দিয়ে জায়গাটা অতিক্রম করতে হয়। তাদের সময় না দিলে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়।’
আহত ছাত্রলীগ কর্মী সভাপতি গ্রুপের আব্দুল বারেক বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে মালিটোলা পার্কের সামনে সভাপতির জন্য অপেক্ষা করার সময় ১২ ব্যাচের ছাত্রলীগ কর্মী সিফাত, শিশির ও মারুফের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা হয়।’
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আক্তার হোসাইন বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীরা ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করার জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থে এসব কর্মকাণ্ড করছে, যারা মারামারি করেছে তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখনো অবগত নই। আমি দূরে আছি। বিষয়টির খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঘটনা সম্পর্কে আমার অবগত হয়েছি। মারামারিতে জড়িত ছাত্রদের চিহ্নিত করে রেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি।’