logo
আপডেট : ১৩ মার্চ, ২০২২ ১২:২১
আইসিইউতে মানহীন চিকিৎসা
উচ্চ মুনাফার ব্যবসা বন্ধ করতে হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক

আইসিইউতে মানহীন চিকিৎসা

দৈনিক ভোরের আকাশ- সবার কথা বলে

দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) নিম্ন মান এবং উচ্চ মুনাফা আদায় নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দীর্ঘদিনের। নামমাত্র বেড দিয়ে বেশি ফি আদায়, ঘণ্টা চুক্তিতে চিকিৎসক ভাড়া, ওষুধের নামে অস্বাভাবিক টাকা আদায় প্রভৃতি আইসিইউ চিকিৎসাসেবাকে সীমিত করে তুলছে দিন দিন।


সংকটাপন্ন রোগীকে সব রকমের সাপোর্ট দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনাই আইসিইউ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। কিন্তু জীবনরক্ষার এই চিকিৎসাসেবা নিয়েও চলছে অমানবিক ও উচ্চ মুনাফার ব্যবসা। উপরন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সুবিধা ও উপকরণ ছাড়াই উচ্চ ফি আদায় করার ঘটনা ঘটছে অহরহ। আইসিইউ চিকিৎসাসেবা নিয়ে ধারণা নেই অধিকাংশ মানুষের। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একশ্রেণির অসাধুচক্র ফায়দা লুটছে। আইসিইউ কক্ষে প্রবেশে থাকে নিষেধাজ্ঞা। দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সদের কাছ থেকেই রোগীর হালনাগাদ অবস্থা সম্পর্কে জেনে নিতে হয়। আর এ সুযোগে চলে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমনিতেই দেশে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) চিকিৎসা সুবিধা খুবই সীমিত। দেশের চার ভাগের তিন ভাগ সরকারি হাসপাতালে এ চিকিৎসা সুবিধা নেই। প্রয়োজনের সময় আইসিইউ চিকিৎসা সুবিধা না পেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অনেক রোগী।


পক্ষান্তরে, অনেক প্রাইভেট হাসপাতালে এ চিকিৎসা সুবিধা থাকলেও তা ব্যয়বহুল। একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার টাকা হিসাবে সপ্তাহ দুয়েকে কমপক্ষে ১০-১৫ লাখ টাকা বিল আসে আইসিইউতে, যা ব্যবস্থা করা তাদের জন্য অনেকটাই দুরূহ। গরিব রোগীর পক্ষে আকাশচুম্বী এ চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা ছাড়া সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না এসব হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ডেকে নিয়ে নামমাত্র আইসিইউ সেবার কাজ চালানো হয়। দেশের বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর মান তদারকিতে বহুবার মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ মনিটরিং টিম। কিন্তু থামেনি অসাধুচক্রের অবৈধ ব্যবসা।


বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, আইসিইউতে জটিল ও মুমূর্ষু রোগীকে রেখে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা করা হয়। মানব শরীরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও মস্তিষ্ক বিকল হয়ে গেলে তখন আইসিইউতে রেখে বিশেষ কিছু যন্ত্রের সাহায্যে এগুলো সচল করা যায়। বড় কোনো সার্জারি বা অপারেশনের পরও কিছু রোগীর আইসিইউ দরকার হয়। আইসিইউতে প্রত্যেক রোগীর জন্য পৃথক ভেন্টিলেটর ও কার্ডিয়াক মনিটর, ইনফিউশন পাম্প দরকার। শক মেডিশন, সিরিঞ্জ পাম্প, ব্লাড ওয়ার্মার থাকতে হয়। পাশাপাশি কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এবিজি মেশিন থাকতে হবে। জরুরি পরীক্ষার জন্য আইসিইউসির সঙ্গে একটি পরীক্ষাগার থাকাও আবশ্যক বলে জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এ ছাড়া যারা ধূমপায়ী ও যাদের দীর্ঘদিন থেকে ডায়াবেটিস আছে- তাদেরও শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে পারে। তাদের আইসিইউ লাগতে পারে। দেশে প্রয়োজনের তুলনায় আইসিইউ অপ্রতুল। এর মধ্যেই চলছে অসাধু চক্রের তপতৎপরতা- যা অত্যন্ত দুঃখজনক।


আইসিইউ বা নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র হাসপাতালের একটি বিশেষায়িত বিভাগ। সরকারি হাসপাতালে যেখানে নামমাত্র খরচেই মিলছে আইসিইউসহ বাকি সব চিকিৎসা, সেখানে বেসরকারি হাসপাতালে লাখ লাখ টাকার প্রতারণা রোগীর ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়ে অবশ্যই নজর দেওয়া উচিত। উচ্চ মুনাফার এ ব্যবসা বন্ধ করতে হবে।

“গরিব রোগীর পক্ষে আকাশচুম্বী এ চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা ছাড়া সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না এসব হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ডেকে নিয়ে নামমাত্র আইসিইউ সেবার কাজ চালানো হয়। দেশের বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউর মান তদারকিতে বহুবার মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ মনিটরিং টিম। কিন্তু থামেনি অসাধুচক্রের অবৈধ ব্যবসা”