বিদায়ের সুর বাজছে বাঙালির প্রাণের বইমেলায়। আর পাঁচদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যাবে মিল বন্ধনের এই মেলা। কিন্তু এর আগেই উপস্থিতি কমে গেছে। গতকাল শনিবার আগের দিনের মতো ভিড় চোখে পড়েনি। যে কারণে বিক্রয় প্রতিনিধি ও প্রকাশকদের মাঝে দেখা গেছে কিছুটা হতাশার ছাপ। কারণ ছুটির দিনে লোকসমাগম এ বেচাবিক্রির ওপর নির্ভর করে প্রকাশকদের সফলতার মাপকাঠি। প্রকাশকরা এ দিনের জন্য অধির আগ্রহে থাকেন।
এর আগে কয়েকদিন মেলায় লোক সমাগম ছিল কম। বিক্রিতেও পড়েছিল ভাটা। প্রকাশকরা আশায় ছিলেন ছুটির দিনে পাঠক ও দর্শনার্থীদের ভিড় ফিরবে এবং বেচাবিক্রিও বাড়বে। কারণ এ দিন দর্শনার্থীদের পাশাপাশি প্রকৃত পাঠকরা আসেন মেলায়। যারা পছন্দের এক বা একাধিক বই সংগ্রহ করে নিজের ব্যাক্তিগত গ্রন্থাগারকে সমৃদ্ধ করেন।
গতকাল শনিবার নামিদামি প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেলেও মাঝারি এবং ছোট প্রকাশনাগুলোর সামনে খুব বেশি চাপ দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে ‘কথাপ্রকাশ’ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক জাফিরুল ইসলাম সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের।
তিনি বলেন, মেলার শেষ সপ্তাহ হিসেবে ছুটির দিনে আশানুরূপ বিক্রি করতে পেরেছি। লোকসমাগম বাড়লে বিক্রিও বাড়ে। তবে আমাদের স্টলের হিসাব দিয়ে পুরো মেলার হিসাব করলে হবে না। বড় ও প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে ‘কথাপ্রকাশের’ হিসাবটা ভিন্ন।
তবে ছোট প্রকাশনীগুলোর দাবি প্রচুর লোক মেলায় আসছে কিন্তু সে অনুযায়ী আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। ফেব্রুয়ারি মাসের মেলার শেষ দিকে সচরাচর যে পরিমাণ বিক্রি হয়, এবার মার্চ মাসে এসে শেষ দিকে তেমন বিক্রি নেই।
এদিকে চাপা ক্ষোভও ছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের লেকপাড়ে স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোর প্রকাশকদের মধ্যে। মেলা প্রাঙ্গণ বাড়িয়ে স্টলগুলো ছড়িয়ে দেওয়া হলেও লেকপাড়ে প্যাভিলিয়নগুলোকে রাখা হয়েছে একপাশে। এতে মেলার জনসমাগম হয়ে পড়েছে এককেন্দ্রিক। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের দিকের স্টল-প্যাভিলিয়নগুলোতে মেলার শুরু থেকেই ক্রেতাদের আনাগোনা ছিল কম। গত বছরের বইমেলা থেকেই এ দিকটি পরিচিতি পেয়েছে ‘অবহেলিত চত্বর’ বা ‘ভাসানচর’ নামে। এ অংশের স্টলগুলোয় ক্রেতাদের আনাগোনা কম। স্টল বরাদ্দের এ অব্যবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ প্রকাশকরা।
গতকাল মেলায় সকালে ভিড় কম থাকলেও বিকেলে কিছুটা বাড়ে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বরাবরের মতো মেলায় প্রবেশ করছেন। আবার কেউ এসেছেন তার ছোট সোনামণিকে বইয়ের সাঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে।
গতকাল শিশুপ্রহর থাকায় বড়দের পাশাপাশি মেলায় ছোটদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অভিভাবকেরাও এ দিন নিজের শিশুটির জন্য কিনেছেন বিভিন্ন ধরনের বই। মা ইসরাত জাহানের হাত ধরে মেলায় এসেছিল শহীদ আনোয়ার স্কুলের শিক্ষার্থী আমিরাহ ছিদ্দিকি। আমিরাহ জানায়, মা এবং বাবার সঙ্গে মেলায় এসেছি। সিসিমপুরের সঙ্গে খেলতে খুব আনন্দ লাগে। মা সিসিমপুরের কয়েকটি বইও কিনে দিয়েছেন।
শিশু প্রহরে দেখা যায়, জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান সিসিমপুরের চরিত্র টুকটুকি, ইকরি, হালুম, ও শিকুদের উপস্থিতি। শিশু-কিশোররাও তাদের সঙ্গে মেতে ওঠে নানা দুটুমিতে। গানের তালে তালে জনপ্রিয় চরিত্রগুলোর সঙ্গে মজা করে শিশু-কিশোররা। তবে টুকটুকি যেহেতু সবসময় বই পড়তে বলে, ভালো বই প্রস্তাব করে, তাই টুকটুকিকে সব থেকে ভালো লাগে শিশুদের। আর এ ধরনের আয়োজন শিশুদের মেধা বিকাশে সহায়ক হবে বলে মনে করেন অভিভাবকরা।