logo
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২২ ০৮:০৫
ভয়াবহ দূষণে ‘মৃত্যুর পথে’ শীতলক্ষ্যা
বিল্লাল হোসাইন, নারায়ণগঞ্জ

ভয়াবহ দূষণে ‘মৃত্যুর পথে’ শীতলক্ষ্যা

কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক পানি, বর্জ্যসহ নারায়ণগঞ্জ নগরীর আবর্জনায় শীতলক্ষ্যা তার রূপ হারিয়েছে। এক সময় স্বচ্ছ পানি থাকলেও এখন তা কালো আর দুর্গন্ধযুক্ত। ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ে স্রোতস্বিনী শীতলক্ষ্যা প্রায় মৃত্যুর পথে।

পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, এ নদীকে বাঁচাতে হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়া প্রয়োজন।

জানা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীকে ঘিরে প্রায় ৪০০ বছর আগে ব্যবসা-বাণিজ্যের শহর হিসেবে গড়ে ওঠে প্রাচ্যের ডান্ডিখ্যাত নারায়ণগঞ্জ। অর্ধশত বছর ধরে নদীর আশেপাশে গড়ে ওঠে শিল্প কারখানা। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও নদীর পানি ছিল স্বচ্ছ ও জলজ প্রাণীর বাস উপযোগী। অনেকে এ নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। এ নদীর পানি ব্যবহার করতেন রান্নাসহ গোসলের কাজে। তখন নদীর দু’পাড়ে প্রাকৃতিক সমৃদ্ধিই ছিল শত কিলোমিটার দীর্ঘ।

তবে সেই শীতলক্ষ্যা এখন মৃতপ্রায়। ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে এককালের স্রোতস্বিনী এ নদী। স্বচ্ছ পানি কালচে রঙ ধারণ করেছে, সঙ্গে আছে দুর্গন্ধ। কুঁচকুঁচে কালো আর উৎকট দুর্গন্ধের পানি ব্যবহার তো দূরের কথা, নদী পথে চলাচলই এখন দুরূহ হয়ে ওঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ড্রেন ও ক্যানেলের মাধ্যমে শিল্প-কারখানা, ডাইং ফ্যাক্টরির রঙিন-কালো পানি নদীতে পড়ছে। আশপাশের এলাকার মানুষের ফেলা বর্জ্যে ক্রমেই দূষিত হচ্ছে নদী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্গন্ধের কারণে নদীর পাড় দিয়ে হাঁটা যায় না। আর যারা খেয়া পার হন তাদের নাকে রুমাল চেপে ধরে যেতে হয়। এ নদীর পানি খাওয়া কিংবা ব্যবহার করা যায় না।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সংগঠনের নারায়ণগঞ্জের সভাপতি জানান, কারখানাগুলোর রাসায়নিক বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নদীতে ফেলা, ইটিপি (বর্জ্য শোধনাগার) থাকলে তা ব্যবহার না করা ও শহরের বর্জ্যরে কারণে শীতলক্ষ্যা এখন মৃত্যুর পথে। ফলে জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব যেমন মারাত্মক সংকটে পড়েছে, তেমন কালো রঙের পানি ও বিদঘুটে গন্ধে আশপাশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এখন শীতলক্ষ্যা নদীকে বাঁচাতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কঠোর হতে হবে। পরিবেশ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে নামমাত্র জরিমানাতে যেন তাদের দায়িত্ব শেষ না হয়।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নারায়ণগঞ্জের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, নদীর তীরবর্তীসহ আশপাশে মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক কলকারখানা আছে। তার মধ্যে ৩১৭টির ইটিপি রয়েছে। ১১৮টি প্রতিষ্ঠানের কোনো ছাড়পত্র ও ইটিপি নেই।

তিনি আরো জানান, যারা আইন মানছে না তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ আদালতে মামলা দায়ের করা হচ্ছে। যাদের কারখানায় ইটিপি রয়েছে কিন্তু ব্যবহার করছে না, তাদের কারখানার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। যারা পরিবেশ দূষণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। জরিমানাসহ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।