logo
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২২ ০৯:২৩
‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকার বাণিজ্যিক চাষ
শাকিল মুরাদ, শেরপুর

‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকার বাণিজ্যিক চাষ

‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকা মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন শফিক

স্বল্পমূল্যে পুষ্টিকর পোল্ট্রি খাদ্য ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা ‘প্যারেট পোকা’ চাষ করে স্বপ্ন দেখছেন শেরপুরের নকলার শফিকুর রহমান শফিক। তিনি একজন উদ্যোক্তা। জেলায় প্রথমবারের মতো এই পোকা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নিজের চাষ করা ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ লার্ভা হাঁস-মুরগিকে খাওয়াচ্ছেন। এ সময় কথা হয় উদ্যোক্তা শফিকুর রহমান শফিকের সঙ্গে।

তিনি জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে প্যারেট পোকা চাষ করার আগ্রহ জাগে। সেই আগ্রহ থেকেই পোকার বীজ সংগ্রহ করি গাইবান্ধা থেকে। পরে ওই এলাকার প্রকৌশলী জুলফিকার আলীর কাছ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকায় প্যারেট পোকার এক কেজি বীজ কিনি। এরপর শুরু করি চাষ ও পরিচর্যা।

দিন দিন বাড়তে থাকে পোকার সংখ্যা। প্রতিদিনের খাবারের ফেলে দেওয়া অংশ পাকা কলা, পঁচা আলু, মাছ ও মুরগির নাড়িভুড়ি, গম ও ভুট্টার গুঁড়াসহ বিভিন্ন ধরনের পচনশীল দ্রব্য দেয়া হয় পোকাগুলোকে। মাত্র ৪৫ দিনের মধ্যেই খামারে শুরু হয় উৎপাদন। তবে সবচেয়ে বেশি লার্ভা পাওয়া যায় গরমকালে।

‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকা 

শফিক বলেন, ‘একটি পূর্ণ বয়স্ক প্যারেট পোকা পাঁচ হাজার ডিম দেয়। মাত্র দশ গ্রাম ডিম থেকে অন্তত ৩০ কেজি লার্ভা পাওয়া যায়। ওইসব লার্ভা হাঁস, মুরগি ও মাছের জন্য খুবই উন্নত মানের খাবার।’

বর্তমানে তার খামারে প্যারেট পোকার লার্ভা ও মাতৃপোকা তৈরি হচ্ছে। আর এর উৎপাদন ব্যয় নেই বললেই চলে। চলতি মাসের ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তত্ত্বাবধানে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। সেখানে তিনি প্যারেট পোকা নিয়ে যান। ওই দিন ময়মনসিংহ জেলা থেকে আসা একদল দর্শনার্থী প্যারেট পোকা চাষের আগ্রহ দেখান। সেই সঙ্গে ওই দর্শনার্থীরা তার কাছ থেকে প্যারেট পোকা কিনবেন বলেও জানান।

স্থানীয় পোল্ট্রি খামারি তোফাজ্জল মিয়া, আতাহার আলী ও শিহাবউদ্দীন বলেন, সব সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই বা প্যারেট পোকা। এই পোকা খুবই উচ্চ প্রোটিন যুক্ত ও অন্যান্য ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ। আর শতভাগ প্রাকৃতিক।

প্যারেট পোকা রোগ বহন করে না। উল্টো ই-কোলাই, স্যালমোনেলা ও টক্সিনের মতো ভয়ঙ্কর রোগকে ধ্বংস করে। এই প্যারেট পোকা উৎপাদন বা পালিত হয় পচনশীল যেকোনো পরিত্যক্ত বস্তু ও বর্জ্য থেকে। যা পরিবেশ ভালো রাখে ও এ থেকে জৈব সার উৎপাদন করে কৃষি জমিতে ব্যবহার করা যায়।

নকলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ডা. আব্দুর আহাদ জানান, কালো সৈনিক পোকা পরিবেশবান্ধব এবং কৃষকের বন্ধু। শুষ্ক অবস্থায় এই পোকার লার্ভা থেকে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আমিষ, ৩০ থেকে ৩৬ শতাংশ স্নেহ এবং ২০ থেকে ২২ শতাংশ শর্করা পাওয়া গেছে।

এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সোডিয়াম ওই পোকার লার্ভাতে রয়েছে। পাশাপাশি ময়লা-আবর্জনা, পচনশীল ফলমূল, শাক সবজি, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা এবং গৃহপালিত প্রাণীর মল ভক্ষণ করে পোকাটির লার্ভা। সেই লার্ভা মাছের বিকল্প খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

এই পোকা জৈব আবর্জনার ৭১.৫ শতাংশ পর্যন্ত ভক্ষণ করে হজম করে থাকে। অবশিষ্ট অংশ বায়োডিজেল, প্রোটিন এবং কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত হয়।

তিনি বলেন, ‘নকলায় অল্প দিনেই প্যারেট পোকা চাষে সফলতা পেয়েছেন শফিক। এ অঞ্চলে কেউ এই পোকা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চাইলে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে।’

কালো সৈনিক পোকা, ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই বা প্যারেট পোকা নিয়ে গত ১১ বছর ধরে গবেষণা করছেন ড. আব্দুস সালাম। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক। এই গবেষণায় তিনি সফলতা পেয়েছেন।