দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সংলাপে বসার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নবগঠিত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম দফায় গতকাল (রোববার) শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠকে বসে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতেই মূলত এই সংলাপের আয়োজন। পর্যায়ক্রমে নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, নারীনেত্রী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। সংলাপ শেষে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাবিদদের প্রথম দফার সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়। আগামী ২২ মার্চ দ্বিতীয় দফায় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের এবং ৩০ মার্চ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও সংলাপ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সংলাপে সবার শেষে আমন্ত্রণ জানানো হবে ইসির নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান করে দেশে ১৩তম নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে সার্চ কমিটি ১০ জনের একটি চূড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেয়। সেই তালিকা থেকে পাঁচজনকে নিয়ে ইসি গঠনের সুপারিশ করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়েই তারা ২৮ তারিখে আনুষ্ঠানিক দায়িত্বগ্রহণ করেন। ইসিতে দায়িত্ব নিয়েই কমিশন সংলাপের এই উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমান ইসির মতো এত দ্রুত সংলাপে যায়নি আগের কোনো ইসি।
বর্তমান ইসি গঠনের আগে গঠিত সার্চ কমিটিও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিতে সংলাপের আয়োজন করে। সেখানে চার দফায় ৫৭ জন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সংলাপ করেন তারা। তাদের মতামতের ভিত্তিতেই ৩২২ জনের তালিকা থেকে বাছাই করে ১০ জনের নাম সুপারিশ করা হয়। উল্লেখ্য, এবারই প্রথম আইনের মাধ্যমে ইসি গঠিত হয়।
দায়িত্বগ্রহণের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ তৈরি, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে সমঝোতার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই এই সমঝোতা প্রয়োজন। শিক্ষাবিদ, বিশিষ্টজন, গণমাধ্যম, নারীনেত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করবেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া পরামর্শ নিয়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করবে ইসি। এরই ধারাবাহিকতায় এই ধারাবাহিক সংলাপের আয়োজন।
এর আগে আরো দুটি নির্বাচন কমিশন দায়িত্বগ্রহণের পরপরই অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে বসে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে কার্যত ওই সংলাপ শুরু হয়েছিল। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসেছিল কেএম নূরুল হুদা কমিশন। সংলাপ শেষে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করা হলেও তাদের আমলে পরিচালিত জাতীয় নির্বাচন নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনের অধীনেই আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৩ সালের শুরু থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করতে চান হাবিবুল আউয়াল কমিশন। আর তার আগেই বিশিষ্টজনদের সঙ্গে সংলাপের এই আয়োজনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন সচেতন মহল। সংলাপে সবার মতৈক্যের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা সহজতর হবে। সর্বোপরি, ব্যক্তি-দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এ ‘সংলাপ আয়োজন’ ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।