logo
আপডেট : ১৪ মার্চ, ২০২২ ১৮:১৩
আশুগঞ্জে জ্বরের ওষুধ খেয়ে দুই শিশুর মৃত্যু
নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ থাকায় বিপাকে রোগীরা
জুয়েল রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ থাকায় বিপাকে রোগীরা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে ‘নাপা’ সিরাপ খেয়ে দুই সহোদরের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর থেকেই জেলার সব ফার্মেসিতে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার নাপা সিরাপ খেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খানের (৫) মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পরপরই জেলার সব ফার্মেসিতে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া কেমিস্ট এবং ড্রাগিস্ট সমিতি।

এদিকে টানা পাঁচদিন ধরে জেলায় নাপা সিরাপ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তার স্বজনরা।

ওষুধ কিনতে আসা মো. রুবেল মিয়া জানান, তার বাচ্চা দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন। ডাক্তার প্রেসক্রিপশনে লিখেছেন নাপা সিরাপ খাওয়াতে। এখন দোকানে এসে ওষুধ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। অন্য ওষুধ নেবেন কিনা তা নিয়ে কিছুটা সংকোচ বোধ করছেন তিনি।

আরেকজন মো. শামিম হোসেন জানান, নাপা ওষুধ নিতে এসে কোথাও খুঁজে না পেয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি। দোকানে যেন তারা তাদের চাহিদামতো ওষুধ পান তার জন্য কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পপুলার ফার্মেসির মো. হানিফ ও সাহা ফার্মেসির দিপক সাহা বলেন, ‘আমরা আমাদের সমিতির নির্দেশনা মতে আপাতত নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধ করেছি। পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখবো।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ঔষধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হোসাইন মো. ইমরান বলেন, ‘আশুগঞ্জ উপজেলায় “মা” ফার্মেসি নামে ১৭টি লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে দুর্গাপুরের মা ফার্মেসির লাইসেন্স আছে কিনা- সেটি স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমাদের পক্ষ থেকে জেলার সব ফার্মেসিতে নাপা সিরাপ বিক্রি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি।’

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের আশুগঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মেডিকেল প্রমোশন এক্সিকিউটিভ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সব ফার্মেসির সঙ্গে আমাদের ব্যবসা নেই। মা ফার্মেসিও আমাদের কাছ থেকে ওষুধ নেয় না। আমাদের কাছ থেকে মাত্র তিনটি ফার্মেসি ওষুধের জন্য অর্ডার দেয়। বাকিরা ভৈরব ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাইকারি দোকানগুলো থেকে ওষুধ কিনতে পারে হয়তো।’

শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো জাকারিয়া জানান, আধা চামচ ওষুধে এত বড় ঘটনা ঘটে যাবে, বিষয়টি সন্দেহজনক। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে ভেতরের ঘটনা বের করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন দুর্গাপুর গ্রামের সড়ক বাজারের মা ফার্মেসির মালিক মো. মঈনউদ্দিন। তবে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটানয় এখনও পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের অভিযোগ দেওয়া হয়নি থানায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। কেন ঘটনা ঘটেছে আমরা তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করছি। চট্টগ্রামের সিআইডি পরিক্ষা কেন্দ্রে থেকে ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পেয়ে আমরা তদন্তের বিষয়ে জানাবো।’

গত ১০ মার্চ রাতে আশুগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে ‘নাপা’ সিরাপ খেয়ে ইয়াছিন খান (৭) ও মোরসালিন খান (৫) নামে দুটি শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ তোলেন স্বজনরা। মৃতরা দুর্গাপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক ইসমাঈল হোসেন ওরফে সুজন খানের ছেলে।