প্রকৃতির দরজায় যখন শীত কড়া নাড়ে, তখন কিছু কিছু গাছের পাতার রং পাল্টাতে শুরু করে। প্রথমে পাতাগুলো সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ, সবশেষ লালচে বর্ণ ধারণ করে। বিবর্ণ পাতাগুলো আস্তে আস্তে ঝরতে শুরু করে। একটা সময় সব পাতা ঝরে পড়ে। আর শূন্য ডালপালা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে শুধু গাছের গুঁড়িটি।
প্রকৃতিতে এখন চলছে বসন্তকাল। শীতে যেসব গাছের পাতা ঝরে গেছে, সেসব গাছে এখন নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। টাঙ্গাইলের মধুপুর বনাঞ্চলের চিত্রও একই। তবে অভিযোগ রয়েছে, এসব শুকনো পাতা কুড়িয়ে নিতে স্থানীয়দের বনে প্রবেশ মূল্য হিসেবে গুনতে হয় তিন হাজার টাকা। এর বিনিময়ে প্রতি ব্যক্তি ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে তিন মাস পর্যন্ত বনে প্রবেশ করতে পারবেন।
প্রায় তিন হাজার স্থানীয় এভাবে পাতা সংগ্রহ করেন। মধুপুর দোখলা বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই অবৈধ কার্যক্রম চলছে।
জানা গেছে, ১৯৮২ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের ৮৪ হাজার ৩৬৬ হেক্টর জায়গাকে মধুপুর ও ভাওয়াল নামে দুটি জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। এই বনের ভেতরে গজারি গাছ সবাইকে মুগ্ধ করে। বর্তমানে এটি দেখভাল করছেন টাঙ্গাইল বিভাগীয় বন বিভাগের দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন স্থানীয় জানান, রাতের আঁধারে বনের গজারি কাঠ কেটে নিয়ে যায় দস্যুরা। তাতে বন বিভাগের কারো সমস্যা হয় না। তবে সাধারণ মানুষ গাছের পাতা নিতে এলে তাদের টাকা দিতে হয়।
দোখলা এলাকার বাদশা নামে এক পাতা সংগ্রহকারী বলেন, ‘তিন হাজার টাকা দিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করেছি। যদি টাকা না দিতাম তাহলে বনের মধ্যে আমাকে ঢুকতে দিত না।’
একই এলাকার বিপ্লব বলেন, ‘এ বছর দুই হাজার টাকা দিয়েছি। তাই ১৫ দিন বনে ঢুকতে পেরেছি। এখন আর বনের ভেতরে ঢুকতে পারছি না।’
পিরোজপুর এলাকার রহিম বলেন, ‘দোখলা রেঞ্জ কর্মকর্তাকে টাকা না দিলে পাতা নেওয়া তো দূরের কথা, বনের ভেতর প্রবেশ করা সম্ভব না।’
এ বিষয়ে দোখলা রেঞ্জ অফিসের সিএফডব্লিও তাজউদ্দীন তাজু বলেন, ‘পাতা সংগ্রহে বনে প্রবেশ বাবদ টাকা নেওয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে সবার খরচ চালাই। যে টাকা নেই তা রশিদের মাধ্যমেই নেই। পাতা বিক্রি করে বন সুন্দর রাখছি।’
টাঙ্গাইলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে শিগগিরই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’